ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী এথেল ক্যাটারহ্যামের দীর্ঘজীবনের গোপন রহস্য

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ২৩ মে ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী এথেল ক্যাটারহ্যামের দীর্ঘজীবনের গোপন রহস্য

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের দীর্ঘজীবীদের জীবনদর্শন সবসময়ই আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয়। তারা কীভাবে এত বছর সুস্থ ও প্রফুল্লভাবে বেঁচে আছেন—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেরে পুরো পৃথিবী। ১১৫ বছর বয়সী এথেল ক্যাটারহ্যাম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী। তার দীর্ঘ ও কর্মবহুল জীবনের মূলমন্ত্র শুনে হয়তো আপনি অবাক হবেন।

একটি সহজ নিয়ম, অসাধারণ জীবন

১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের শিপটন বেলিঞ্জার গ্রামে জন্ম নেওয়া এথেল তাঁর জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসেছেন—বিশ্বযুদ্ধ, প্রযুক্তি বিপ্লব, সমাজের আমূল পরিবর্তন। এত কিছুর মাঝেও তিনি নিজের একটি সহজ নীতিতে অটল থেকেছেন: “কাউকে নিয়ে তর্ক করো না। আমি শুধু শুনি এবং নিজের মতো চলি।” এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে শান্ত থাকার, আত্মসম্মান বজায় রাখার এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার এক অসাধারণ বার্তা।

বিজ্ঞান যা বলে, তা-ই প্রমাণ করে এথেলের জীবন

গবেষণায় প্রমাণিত, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও বিরোধিতা হৃদরোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং দ্রুত বার্ধক্যের সঙ্গে জড়িত। জীবনে অপ্রয়োজনীয় তর্ক এড়িয়ে গিয়ে এথেল হয়তো নিজের শরীর ও মনকে সুরক্ষিত রেখেছেন। আর তাই শত বছর পেরিয়ে এখনও তিনি জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাননি।

সহজ জীবনের ভিতরেই ছিল শক্তি

এথেল ছিলেন আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ। ঘোড়ার গাড়ি, হাতে লেখা চিঠি আর বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ের পৃথিবীতে বেড়ে ওঠা এই নারী ছোটবেলা থেকেই স্বাভাবিক, শান্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি ছিলেন স্থির, সহনশীল এবং উদারমনস্ক।

মানসিক শান্তি ও দীর্ঘজীবনের সম্পর্ক

গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিকভাবে স্থিতিশীল ও ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখা মানুষের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। বারবার তর্কে জড়িয়ে পড়া বা মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা বয়সভিত্তিক নানা রোগের কারণ হতে পারে। এথেলের ‘শোনো ও নিজের মতো চলো’ দর্শন তাই এক ধরনের মানসিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, যা সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি।

ভ্রমণপ্রেমী এথেল: কৌতূহল ধরে রাখাই আরেক চাবিকাঠি

১৮ বছর বয়সে এথেল ভারত সফরে যান ন্যানির কাজ করতে। এরপর স্বামীর সঙ্গে হংকং ও জিব্রাল্টারে বসবাস করেন। ব্রিটিশ আর্মির মেজর ছিলেন তার স্বামী। এ সব অভিজ্ঞতা তার মনকে উদার ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করেছে, যা দীর্ঘজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১১৫ বছরের জীবন, ভালোবাসা ও শান্তি—এথেলের কাছ থেকে শেখার বিষয়

সম্প্রতি এথেল তার ১১৫তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সেবিকাদের সঙ্গে। তিনি প্রমাণ করেছেন, দীর্ঘজীবন কেবল বয়সের সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়—জীবন যাপন কেমন হচ্ছে, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

এথেল ক্যাটারহ্যামের কাছ থেকে পাওয়া জীবনের পাঠ:

তর্ক এড়িয়ে চলুন: অহেতুক বিরোধ বা রাগ-ক্ষোভ এড়িয়ে চললে মানসিক চাপ কমে এবং শান্তি বজায় থাকে।

নিজের মতো জীবন যাপন করুন: নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন, এতে জীবনে তৃপ্তি আসে।

কৌতূহল ধরে রাখুন: নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ জীবনের প্রতি আগ্রহ ও মানসিক সক্রিয়তা বাড়ায়।

মানসিক স্থিরতা বজায় রাখুন: মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, মাইন্ডফুলনেস—এসব অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।

বিজ্ঞান যা বলছে, তা-ই প্রমাণ করেছে এথেল

বর্তমান বিজ্ঞানও বলছে, দীর্ঘায়ু পেতে হলে শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, জলপান ও মানসিক চাপ কমানো দীর্ঘজীবনের মূল উপাদান।

এথেল ক্যাটারহ্যামের জীবন আমাদের দেখায়, শান্ত থাকা, তর্ক এড়িয়ে চলা এবং নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করাই হতে পারে দীর্ঘজীবনের সেরা চাবিকাঠি।

আসিফ

×