ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

শিশুদের ‘বাটারফ্লাই স্কিন’ রোগ: লক্ষণগুলো কী কী?

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১২ মে ২০২৫

শিশুদের ‘বাটারফ্লাই স্কিন’ রোগ: লক্ষণগুলো কী কী?

ছবি: সংগৃহীত।

তাদের শরীরের ত্বক যেন একেকটি প্রজাপতির পাখা—অতিমার্জিত, কিন্তু ভঙ্গুর। হালকা স্পর্শেই ছিঁড়ে যেতে পারে। এ এক বিরল, যন্ত্রণাদায়ক এবং আজীবনের জন্য বয়ে বেড়ানো রোগ—নাম তার 'বাটারফ্লাই স্কিন' বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এপিডারমোলাইসিস বুলোসা (Epidermolysis Bullosa)। শিশুদের মধ্যে এ রোগের দেখা মেলে বেশি, আর তারা প্রতিদিন যন্ত্রণার মধ্যেই বেড়ে ওঠে। চিকিৎসা জটিল, ব্যয়বহুল এবং এখনো এ রোগের কোনো নিরাময় নেই।

‘বাটারফ্লাই স্কিন’ রোগ নামটি শুনতে কাব্যিক লাগলেও বাস্তবতা ভয়াবহ। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা সামান্য ঘর্ষণ, চাপ বা আঘাতে ত্বকে ফোসকা পড়ে যায়, ছিঁড়ে যায় চামড়া, এমনকি কখনো কখনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ক্ষত তৈরি হয়।

‘এপিডারমোলাইসিস বুলোসা’ (EB) হলো একটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এতে শরীরের ত্বকের নিচে এমন এক প্রোটিনের অভাব থাকে, যা ত্বকের স্তরগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখে। ফলে ত্বক খুবই স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এ রোগের প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে—সিমপ্লেক্স, জাংকশনাল ও ডার্মোলাইসিস টাইপ, যেগুলোর উপসর্গের তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে।

লক্ষণসমূহ:

  • ত্বকে হালকা ঘর্ষণেই ফোসকা ও ক্ষত
  • মুখ, চোখ, নাক ও গলার অভ্যন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি
  • নখ অস্বাভাবিক হওয়া বা পড়ে যাওয়া
  • ত্বকে দাগ ও চুলকানি
  • দীর্ঘমেয়াদে ত্বকে পুরু ও শক্ত স্তরের গঠন
  • ক্ষতস্থানে সংক্রমণ, জ্বর এবং ব্যথা
  • কখনো কখনো খাওয়াতে ও গিলতে কষ্ট হওয়া

রোগীদের জীবনযাত্রা
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রতিদিনের জীবন মানে সতর্কতার জীবন। তাদের জামাকাপড়, বিছানা, এমনকি কোলে নেওয়ার সময়ও অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। সংক্রমণ এড়াতে প্রতিদিন ক্ষত পরিষ্কার করতে হয়, ব্যান্ডেজ বদলাতে হয়—যা অত্যন্ত কষ্টকর প্রক্রিয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না, খেলাধুলা তো অনেক সময় একদমই নিষিদ্ধ।

চিকিৎসা ও সহায়তা
এই রোগের এখনো স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে উপসর্গ লাঘব, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে জিন থেরাপি ও স্টেম সেল গবেষণা চললেও এখনো তা সবার জন্য সহজলভ্য নয়। এ ছাড়াও রোগীদের মানসিক সহায়তা ও সামাজিক সমর্থনও অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশে বাস্তবতা
বাংলাদেশে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা খুবই সীমিত। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। রোগীর পরিবারগুলো আর্থিক ও মানসিক চাপে পড়ে যায়। প্রয়োজন বাটারফ্লাই শিশুদের জন্য একটি সহায়ক ও সম্মানজনক পরিবেশ, যাতে তারা সমাজে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।


‘বাটারফ্লাই স্কিন’ শুধু একটি রোগ নয়, এটি এক অভিশপ্ত জীবনযাত্রার নাম। কিন্তু একটু সচেতনতা, সহানুভূতি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগই পারে এই শিশুদের জীবনে আলো আনতে।

নুসরাত

×