ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রান্নাবান্না –

তাহমিনা বেগম

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

রান্নাবান্না –

.

‘পল্লীস্মৃতি’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন, ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে,/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ এখন আর পিঠা খাওয়ার সেই উৎসব নেই। তাই বলে কি পিঠা খাব না! প্রায় সবার খুব প্রিয় কিছু পিঠা-পুলি বানানোর পদ্ধতি জানিয়েছেন-

দুধ চিতই
যা লাগবে : চিনি গুঁড়া চাল ২৫০ গ্রাম, নাজিরশাইল চাল ১২৫ গ্রাম (সিদ্ধ), রান্না করা ভাত ১ মুঠি, পানি ২ কাপ, লবণ ১ চা চামচ, দুধ এক/দেড় লিটার, গুঁড়া দুধ ১ কাপ, খেজুরের গুড়  ৩০০ গ্রাম (পছন্দমতো)।
যেভাবে করবেন : চিনিগুঁড়া চাল সিদ্ধ আর নাজিরশাইল চাল একসঙ্গে ভালোভাবে ধুয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ৫ ঘণ্টা। তারপর ব্লেন্ডারে ভিজিয়ে রাখা চাল ও ভিজানো চালের পানি থেকে ২ কাপ পানি লবণ দিয়ে ব্লেন্ডারে ১ মিনিট ব্লেন্ড করুন। এবার এক মুঠো ভাত লবণ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। চুলায় মাটির পিঠার ছাঁচের পাতিল বসিয়ে, একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে তেল দিয়ে পিঠার খোপগুলো মুছে নিন। এবার পাতিল ভালোভাবে গরম হলে একটি গোল চামচ দিয়ে মাটির ছঁাঁচের পাতিলে এক চামচ করে ব্লেন্ড করা ব্যাটার দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ মাঝারি হাই ফ্লেমে রাখবেন। ২ থেকে ৩ মিনিটে পিঠাগুলো হয়ে যাবে। পিঠাতে ফোঁটা ফোঁটা পড়বে ও সুন্দর মতো ছাঁচ থেকে উঠে আসবে। আবার তেল লাগানো পাতলা কাপড় দিয়ে ছাঁচগুলো মুছে চালের গুঁড়ার ব্যাটার থেকে আগের মতো দেবেন। এভাবে পিঠাগুলো সব তৈরি করে নিন। এবার তরল দুধের সঙ্গে গুঁড়া দুধ, খেজুরের গুড় মিক্স করে জ্বাল দিয়ে আগে থেকে বানিয়ে রাখা চিতই পিঠাগুলো দিয়ে ঢেকে সারা রাত ভিজিয়ে রাখবেন। দেখবেন পিঠাগুলো যেমন নরম হবে, তেমনি মজাও।


বিবিখানা পিঠা

যা লাগবে : চালের গুঁড়া এক/দেড় কাপ, ময়দা হাফ কাপের কম, লবণ ১/৪ চা চামচ, বেকিং পাউডার ১ চা চামচ (পিঠা সফট থাকার জন্য), ডিম ২টা (ঘরের তাপমাত্রায় রাখা), ঘি- ১/৪ কাপ, খেজুরের গুড় হাফ কাপ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, নারিকেল কোরা ৩/৪ কাপ, দুধ হাফ কাপ (গুঁড়া দুধ এক কাপ পানিতে মিশিয়ে নিয়েছি। ইচ্ছা করলে ১ কাপ ঘন দুধও দিতে পারেন)।
যেভাবে করবেন : প্রথমে চালের গুঁড়া, ময়দা, বেকিং পাউডার, লবণ চালনিতে চেলে রাখুন। তারপর একটি বাটিতে ডিম, ঘি, খেজুরের গুড়, চিনি, নারিকেল কোরা, দুধ একসঙ্গে মিক্স করে নিন। এবার আস্তে আস্তে চেলে রাখা চালের গুঁড়া মিক্স করুন। মিক্স হয়ে গেলে একটা বাটিতে ঘি ব্রাশ করে অথবা হাত দিয়ে লাগিয়ে দিন। এবার মিশ্রণটা বাটিতে ঢালুন। চুলায় একটি হাঁড়ি বসিয়ে পানি দিয়ে স্ট্যান্ড বসিয়ে ৫ মিনিট হাই হিটে চুলার আঁচ রাখুন। এবার বাটিটা স্ট্যান্ডের ওপর বসিয়ে দিন। পানি এমনভাবে দেবেন যেন হাঁড়ির পানি বাটিতে না ঢোকে। বাটির ওপর একটা ঢাকনা দিয়ে দিন। তারপর হাঁড়ির ওপর একটা ঢাকনা দিন। ঢাকনায় ফুটা থাকলে কাগজ মুড়িয়ে ফুটা বন্ধ করে দিন। ৫ মিনিট হাই হিটের পর চুলার আঁচ কমিয়ে ১ ঘণ্টা পিঠাটা বেক করতে থাকুন। ৪৫ মিনিট হলে একবার হাঁড়ির ঢাকনা খুলে একটা ঠুথপিক দিয়ে চেক করে নেবেন। যদি কাঠিটা ভিজে যায় তা হলে আরও ১৫ মিনিট হিট করে নামিয়ে প্লেটে নিয়ে উপরে ফ্রেশ নারিকেল ও কাঠবাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ স্বাদের বিবিখানা পিঠা।

দুধ পুলি
যা লাগবে : পুরের জন্য : ঘি ২ চা চামচ, দারুচিনি ছোট ২/৩ টুকরা, এলাচি ৩টা, নারিকেল কোড়া ২ কাপ, গুড় ১ কাপ (মিষ্টি বেশি খেলে বেশি দেবেন), গুঁড়া দুধ হাফ কাপ (ইচ্ছে করলে বাদ দিতে পারেন)।
খামিরের জন্য : চালের গুঁড়া ৩ কাপ, পানি ৩ কাপ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী।
পিঠা দুধে ভেজানোর জন্য : দুধ ১ লিটার, গুঁড়া দুধ হাফ কাপ (আমি ড্যানো গুঁড়া দুধ দিয়েছি), গুড়/চিনি ১ কাপ (হাফ কাপ গুড়, হাফ কাপ চিনি দিতে পারেন)।
যেভাবে করবেন : প্রথমে চুলায় প্যান বসিয়ে প্যানে ঘি দিন দিয়ে দারুচিনি, এলাচি দিন। নারিকেল, গুড় দিয়ে নাড়তে থাকুন। এই পর্যায়ে চুলার আঁচ মিডিয়াম লোতে রেখে আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন। আলাদা কোনো পানির প্রয়োজন নেই। গুড় গলে পানি বের হতে থাকলে আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসলে গুঁড়া দুধ দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। দুধটা দিলে স্বাদ বেড়ে যায়। পিঠা বানানোর সময় দারুচিনি, এলাচি বেছে ফেলে দিন। এবার একটি হাঁড়িতে খামিরের জন্য পানি ও লবণ দিন। পানি ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে একটি কাঠি দিয়ে একটু ফাঁক ফাঁক করে দিয়ে ঢেকে রাখুন ৫ মিনিট। ঢাকনা তুলে নেড়ে নিন ভালোভাবে। এবার একটা ডিশে ঢেলে একটু গরম গরম মথে নিন। তারপর একটু একটু খামির নিয়ে বেলুন দিয়ে বেলে অথবা হাত দিয়ে চেপে চেপে (অথবা বাজারে প্লাস্টিকের ছাঁচ পাওয়া যায়) মাঝখানে নারিকেলের পুর দিয়ে ভাজ করে কিনারটা টিপে টিপে মুড়িয়ে নিন। এভাবে সব পিঠা হয়ে গেলে চুলায় একটা হাঁড়িতে অর্ধেক পানি দিয়ে বসান। পানি ফুটে উঠলে তার ওপর একটা ঝাঝরিতে (ফুটা ফুটা হাঁড়ি) পাতলা সাদা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর পিঠাগুলো বিছিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে ঢাকনা দিয়ে ১৫ মিনিট ভাপ দিয়ে নামিয়ে নিন সাবধানে। এবার লিকুইড দুধ একটা হাঁড়িতে জ্বাল দিন। সঙ্গে গুঁড়া দুধ, গুড়/চিনি দিয়ে দিন। এবার পুলি পিঠাগুলা দুধে দিয়ে ১৫ মিনিট জ্বাল দিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল দুধ পুলি পিঠা।


বিফ রিং পিঠা

যা লাগবে : খামিরের জন্য : ময়দা ২ কাপ, লবণ ১ চা চামচ, সয়াবিন তেল ২ চা চামচ, পানি পরিমাণ মতো।
পুরের জন্য : বিফ কিমা হাফ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া হাফ চা চামচ, ধনে গুঁড়া হাফ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া হাফ চা চামচ, লাল মরিচ গুঁড়া ১ চামচ, গরম মসলা গুঁড়া হাফ চা চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ৪টি, ধনে পাতা কুচি ১/৪ কাপ, সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, ভাজার জন্য তেল পরিমাণ মতো।
যেভাবে করবেন : প্রথমে ময়দা ময়ান করে ১৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। তারপর প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ নরম হয়ে আসলে আদা-রসুন বাটা দিন। হলুদ, মরিচের গুঁড়া দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার বিফ কিমা দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর পর নেড়ে দিন। কিমা থেকে বের হওয়া পানি শুকিয়ে গেলে আরও ১ কাপ গরম পানি দিয়ে ভাজা জিরা ও ধনে গুঁড়া দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ রান্নার পর পানিটা মাখা মাখা হলে কাঁচামরিচ কুচি, গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে নেড়ে দিন। এবার পানি শুকিয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এবার খামির থেকে রুটির জন্য ডো নিয়ে রুটির মতো বেলে নেই। এবার রুটির এক পাশে বিফ কিমা দিয়ে রোলের মতো একপাশে পেঁচিয়ে রুটির বাকি অংশে ছুড়ি দিয়ে সমান দূরত্বে দাগ দাগ করে কেটে নিন। এবার প্যাঁচানো অংশটা কাটা জায়গায় মুড়িয়ে নিন। কাটা অংশের জন্য রিংয়ের মতো দেখাবে। (রিংয়ের দুই পাশে একটু পানি লাগিয়ে হাত দিয়ে টিপে আটকিয়ে দিন)। এভাবে সব বানিয়ে নিন। এবার একটি প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিন। চুলার আঁচটা মিডিয়াম লোতে রেখে পিঠাগুলো উল্টে-পাল্টে ভাজতে থাকুন। সোনালি রং হলে নামিয়ে সস বা সালাদ দিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ মজার বিফ রিং পিঠা।

 

×