
দুই পুত্র ইমরান ও অপূর্ব
দুই পুত্র সন্তানের জননী মা ডলি আক্তার। ২ বছর আগে স্বামী মারা যান হরেক রকম শারীরিক জটিলতায়। দুই পুত্র ইমরান ও অপূর্ব। পিতা মারা যাবার পর থেকেই মার নিঃসঙ্গতায় দুই ছেলেই ভারাক্রান্ত। পিতা ইয়াদ আলী গত হলে মায়ের একাকিত্বে ছেলেরা একেবারেই বিমর্ষ। মা ডলি আক্তারের বয়স ৪২। লেখাপড়াও বেশি দূর গড়ায়নি। মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে শিক্ষাকর্মের পাঠ চুকিয়েছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ অপূর্বের দেওয়া এক বিজ্ঞাপন চমকপ্রদ হওয়ার মতোই। ডলি আক্তারের ছেলে এই অপূর্ব মায়ের জন্য পাত্র খুঁজতে বিজ্ঞাপনের শরণাপন্ন হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই আকৃষ্ট করেছে। অপূর্ব ‘জিএ্যান্ড টেক’ নামের এক অনলাইন পেজে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বড় ভাই মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনিও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিজেকে বড় বেশি ব্যস্ত রাখেন। সঙ্গতকারণে দুই পুত্র সন্তানই ভাবছেন মায়ের অসহনীয় একাকী দিনযাপন সত্যিই বেদনাদায়ক। মাকে সব সময়ের জন্য একজন সঙ্গী দেয়াও কর্তব্য মনে করছেন তার গর্ভজাত সন্তানরা।
অভিনব, ব্যতিক্রমী এবং অনন্য ভাবনা। সাধারণত সন্তানরা মাকে নিজেদের মধ্যেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। মায়ের সেবা পরিচর্যায় বড় হওয়াও সন্তানদের আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন। তবে মাকে ভাল রাখতে সব সন্তানই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সব কিছু করতে একেবারে অকুণ্ঠিত। তবে ব্যস্ততম সন্তানরা আসলেই সেভাবে কখনও ভাবেও না। পিতার অবর্তমানে মায়ের দুঃসহ সময়গুলো কিভাবে কাটে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুই ছেলের সঙ্গেই মায়ের সম্পর্ক গভীরই শুধু নয়- তার চেয়েও বেশি বন্ধুত্বের এক অকৃত্রিম বাঁধনও। সেভাবেই তারা অনুভব করলেন মায়ের প্রতি মুহূর্তের অন্তরনিঃসৃত বেদনা, স্বামীকে হারানোর অসহনীয় শোকগাথা।
বড় সন্তান ইমরান বিবাহিত। তার পাঁচ বছরের এক সন্তানও আছে। তবে বাবা মারা যাওয়ার আগ থেকেই সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকাও পারিবারিক নির্মল সম্পর্ক। এই নিবিড় সান্নিধ্যে আটকানো দুই সন্তানই ভাবতে বসেন- মা তাদের সঙ্গে সব আনন্দ-দুঃখ ভাগ করে নিতে কেমন যেন কুণ্ঠিত। অকপটে সব কথা বলতেও দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগেন।
তাদের মতে মায়ের বয়স এমন কিছু বেশি নয়। মা স্বাচ্ছন্দ্যে কোন একজন পছন্দের মানুষের সঙ্গে সংসার করতে পারেন। তাদের দুই ভাইয়েরই বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। মায়ের নতুন জীবন গড়া নিয়ে ছোটজন অপূর্ব কথাও বলেছেন নির্দ্বিধায় মমতাময়ী জননীর সঙ্গে। শেষ অবধি মায়েরও সম্মতি আদায় হলো। বড় ভাই ইমরানও সানন্দে মত দিয়ে দিল। আর কোন বাধা না থাকায় অপূর্ব সাহস করে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে দিল মায়ের জন্য একজন ধার্মিক সুপাত্রের। হ্যাঁ অবশ্যই মায়ের জন্য নির্বাচন করা মানুষটিকে নামাজ পড়তেই হবে।
একজন ভাল জীবনসঙ্গী মায়ের জন্য খুব প্রয়োজন। সন্তানদের এমন মানবিক আবেদন ও বিচারবোধে মা ডলি আক্তারও নিশ্চিন্ত এবং খুশি। তবে একটাই বিষয় নতুন মানুষকে তার সন্তানদের জন্য কিছু করাও দরকার। ছেলেদের তেমন কোন অভাব অভিযোগ নেই। চাওয়া-পাওয়াও নেই। শুধু তাদের আপন করে নিলেই মা ডলি আনন্দিত হবেন।
ইমরান ও অপূর্বকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। মায়ের জন্য এমন একটি মহৎ ভাবনা করায়। সত্যিই তো ছেলেরা নিজেদের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। নিঃসঙ্গ ও একাকিত্বের বোঝা আর কত সামলানো যায়। আমরা আশা করব মা ডলি আক্তারের জন্য পছন্দ মতো একজন সুপাত্র যেন আল্লাহই মিলিয়ে দেন।
অপরাজিতা প্রতিবেদক