ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেসমিন আহমেদ

নখের সমস্যায় করণীয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২ এপ্রিল ২০১৮

নখের সমস্যায় করণীয়

বেকায়দাভাবে যখন নখ বৃদ্ধি পায় এবং নখ নিচের মাংসের ভেতর ঢুকে যায় তখন নখের কোনায় প্রচ ব্যথা অনুভূত হয়। এই সমস্যাকে ‘নখের কোনা ওঠা’ বলা হয়। হাতের নখের থেকে পায়ের নখে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ পায়ের নখে তুলনামূলকভাবে ধুলো-বালি, ময়লা, ঘাম, পানি বেশি লাগে। ফলে নখের কোনে ইনফেকশন দেখা দেয়। কখনও কখনও ব্যথার সঙ্গে হলুদ পুজও দেখা যায়। নখের কোনা ওঠার প্রথম চিকিৎসা হলো নখের যে বাড়তি অংশের জন্য ব্যথা হচ্ছে সেই অংশটুকু কেটে ফেলতে হবে। তাহলে ব্যথা সঙ্গে সঙ্গে কমে যাবে। যদি নখের কোনায় পুজ জমে থাকে তাহলে টপিকাল এন্টিবায়োটিক লাগাতে হবে অথবা ওরাল এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। তবে ইনফেকশন হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভাল। এছাড়াও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান, জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম উপায়। তাই নখ সব সময় সোজাভাবে কাটতে হবে, পায়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বাহির থেকে আসার পর পা ও হাত ভালভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে মুছে ফেলতে হবে, পরিষ্কার জুতা ও মুজা পরতে হবে, আরামদায়ক ও পায়ের মাপ মত জুতা পরতে হবে, প্রতিদিন গোসলের সময় পায়ের নিচের শক্ত চামড়া পরিষ্কার করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন নখের কোনা ওঠা সমস্যায় ভুগে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভাল। শরীরের বিভিন্ন অংশের মতো নখ নিয়েও পড়তে হয় নানা সমস্যায়। সুন্দর নখ যেমন হাত-পায়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে ঠিক তেমনই নখে যে কোন সমস্যা হলে হাত কিংবা দুটি দেখতে অসুন্দর হয়ে পড়ে। নখ বড় না হলে নখের ওপরে এবং চারপাশে ম্যাসাজ করে নখের গ্রোথ বাড়াতে পারেন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং নখ দ্রুত বাড়ে। নখ হলদে হয়ে গেলে টানা বেশিদিন নেলপলিশ দিয়ে রাখলে নখ বাতাসের অভাবে হলদে হয়ে যায়। মাঝে মাঝে নেলপলিশ ছাড়া নখ খালি রাখুন। নেলপলিশ দেয়ার আগে নখে বেসকোট দিয়ে নেলপলিশ লাগালে নখ সুরক্ষিত হয়। ভাল শেপ না এলে দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস ত্যাগ করুন। দাঁত দিয়ে নখ কাটলে নখ ও কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যতক্ষণ না নখ বেশি বড় হচ্ছে, ততক্ষণ নখ না কাটাই ভাল। ফাইলার দিয়ে ফাইল করলেই যথেষ্ট। কখনও সোজাসুজি ফাইলার ধরে নখ ফাইল করবেন না। ফাইলার ৪৫ ডিগ্রী কোণ করে নখের নিচ থেকে ধরে ফাইল করুন। পায়ের নখ ভেতরের দিকে বৃদ্ধি পাওয়াকে ওনাইকোক্রিপ্টোসিস বলে যা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। একে নখকুনিও বলা হয়। যখন পায়ের নখের কোনার অংশ বা প্রান্তের অংশ নরম মাংসের ভেতরের দিকে প্রবেশ করে তখন খুবই অস্বস্তি ও ব্যথার সৃষ্টি করে। সাধারণত নখকুনি পায়ের আগুলেই হয়ে থাকে কিš' হাতের আগুলেও হতে পারে তবে তা খুবই বিরল। নখকুনি হওয়ার কারণ খুব বেশি টাইট-ফিটিং জুতা পরলে, নখ সঠিক ভাবে না কাটলে, নখে ব্যথা পেলে এবং অস্বাভাবিক বাঁকানো নখ থাকলে। ডায়াবেটিস ও অন্য স্বাস্থগত সমস্যা থাকলে পায়ের রক্ত সংবহন কমে যায় ফলে পায়ের নখের এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। নখে খুব বেশি ব্যথা হওয়া, লাল হওয়া এবং ফুলে যাওয়ার মত উপসর্গগুলো দেখা যায় নখকুনি হলে। যদি এর চিকিৎসা করা না হয় তাহলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন হলে নখের চারপাশ লাল হয়ে ফুলে যায়, পুঁজ ও রক্ত বাহির হয়। যদি শুরুতেই বুঝতে পারা যায় তাহলে ঘরেই এর যতœ নেয়া যায়। যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। নখকুনির ঘরোয়া প্রতিকারগুলো জেনে নেই আসুন। উষ্ণ জলে ভিজানো উষ্ণ জলে কিছুণ পা ডুবিয়ে রাখলে নখকুনির ব্যথা ও ফোলা কমে যায়। এজন্য একটি ছোট বোলে উষ্ণ গরম পানি নিন। এই পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন ১৫-২০ মিনিট। দিনে ৩-৪ বার এটি করতে পারেন। নখের নিচে গজ দিয়ে রাখুন গরম জলে পা ডুবানোর পরে আক্রান্ত নখের নীচে তুলা বা গজ বা সুতির নরম কাপড় ঢুকিয়ে দিলে নখটি উপরের দিকে উঠে আসবে। উষ্ণ গরম পানিতে কিছুণ পা ডুবিয়ে রাখার পরে ভালো করে পা মুছে নিন। তারপর ভোঁতা চিমটা দিয়ে আক্রান্ত নখটি সাবধানে উপরে উঠান এবং ত্বক ও নখের মাঝখানে সুতির কাপড়ের টুকরাটি ঢুকিয়ে দিন। ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য প্রতিবার পা ভেজানোর পরে কাপড়টি পরিবর্তন করে নিন। ইপসম লবণ ইপসম লবণের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা নখের অন্তরবৃদ্ধির চিকিৎসায় কার্যকরী। এটি আক্রান্ত নখের ত্বককে নরম হতে সাহায্য করে। যার ফলে মাংসের ভেতরে ঢুকে যাওয়া নখকে বের করা সহজ হয় এবং প্রদাহ ও কমে। এর জন্য উষ্ণ গরম পানিতে পূর্ণ একটি বোলে ১ টেবিলচামচ ইপসম লবণ মিশান। এই মিশ্রণে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। তারপর মিশ্রণটি থেকে পা উঠিয়ে ভালো করে পা মুছে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন। এছাড়াও হাইডে"াজেন পারওক্সাইড, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান, লেবু, টি টি" ওয়েল, আপেল সাইডার ভিনেগার ও হলুদ ব্যবহার করা যায়। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই শ্রেয়। তাই নখ সোজা ভাবে কাটুন, পায়ের স্বা¯'্যবিধি মেনে চলুন, বাহির থেকে আসার পর পা ভালো করে ধুয়ে মুছে নিন, আরামদায়ক ও পায়ের মাপ মত জুতা পরুন, প্রতিদিন গোসলের সময় ঝামা পাথর দিয়ে পা ঘষুন যাতে পায়ের ত্বক শক্ত হয়ে না যায় এবং প্রতিদিন পরিষ্কার মোজা পড়ুন।
×