
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত। যদিও এটি পুরুষদের মধ্যেও ঘটতে পারে, তবে এমন ঘটনা খুবই বিরল। প্রথম দিকে ধরা পড়লে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য, এবং অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসার পর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
তবে এই রোগের শুরুতে উপসর্গগুলো অনেক সময় খুবই মৃদু হয় এবং সচরাচর তা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে যদি পরিবারে (মা, বোন, খালা) কারও এই রোগ হয়ে থাকে, তাহলে নিয়মিত শরীর পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
চলুন জেনে নিই স্তন ক্যান্সারের ৫টি এমন প্রাথমিক লক্ষণের কথা, যেগুলো অনেকেই অবহেলা করে ফেলেন—
১. স্তনের ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
স্তনের চামড়ার স্বাভাবিক টেক্সচারে হঠাৎ পরিবর্তন, যেমন টান পড়া, কুঁচকে যাওয়া বা কমলা পাতার মতো খসখসে হয়ে যাওয়া স্তন ক্যান্সারের একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত হতে পারে।
এই উপসর্গটি সাধারণত তখন দেখা দেয়, যখন ক্যান্সার কোষগুলো চামড়ার নিচের লসিকা (লিম্ফ) পথ আটকে দেয়, ফলে চামড়া ফুলে যায় এবং ঘন হয়ে পড়ে।
অনেকে একে চর্মরোগ বা একজিমা ভেবে ভুল করেন, তাই এটি প্রায়ই নজর এড়িয়ে যায়।
২. নিপলে (বোঁটা) অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন
স্তনের বোঁটা বা নিপলের হঠাৎ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, আকৃতির পরিবর্তন বা হঠাৎ অস্বাভাবিক তরল নিঃসরণ—এগুলোও ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাব্য প্রাথমিক লক্ষণ।
এই নিঃসরণ স্বচ্ছ বা রক্তমিশ্র হতে পারে এবং অনেক সময় নিপল চেপে না ধরলেও তরল বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন স্বাভাবিক হয়ে থাকে, তবুও হঠাৎ বা স্থায়ী পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. বগলে বা কাঁধের নিচে অস্বাভাবিক ফোলা
অনেক সময় ক্যান্সার প্রথমে স্তনে না গিয়ে পাশে থাকা লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বগলের নিচে বা গলার পাশে গাঁট দেখা দিতে পারে, যা শক্ত, ব্যথাযুক্ত বা অসমান আকৃতির হতে পারে।
চেহারা বা গলার কোনো সংক্রমণ ধরে নিয়ে অনেকেই একে গুরুত্ব দেন না, ফলে সময়মতো শনাক্ত হয় না।
৪. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা অবসাদ
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে ক্লান্তি সাধারণ বিষয় হলেও, যদি বিশ্রামের পরেও অবসাদ না কাটে, সঙ্গে ওজন কমে যায় বা ক্ষুধা কমে যায়—তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়।
শরীর যখন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন অনেক শক্তি ক্ষয় হয় এবং দেহে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দেখা দিতে পারে, যা প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৫. স্তন বা নিপলে স্থায়ী ব্যথা
হরমোন পরিবর্তনের কারণে মাসিক চক্রে অনেক নারীর স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে যদি ব্যথাটি একই জায়গায় থেকে যায়, নতুনভাবে শুরু হয় এবং মাসিকের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকে, তবে তা অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত।
এই ব্যথা তীক্ষ্ণ, পোড়া বা স্পন্দিত ধরনের হতে পারে। যদিও স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত ব্যথা হয় না, তবুও নতুন কোনো অস্বাভাবিক ব্যথাকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
সতর্কতা: এই প্রতিবেদনটি কেবল তথ্যভিত্তিক। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। শরীরে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব