ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে হামলার আগে ভারত-পাকিস্তানকে পাশে টানতে চাচ্ছেন ট্রাম্প?

মেহেদী কাউসার

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৮ জুন ২০২৫

ইরানে হামলার আগে ভারত-পাকিস্তানকে পাশে টানতে চাচ্ছেন ট্রাম্প?

ছ‌বি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে পৃথক আলোচনা চালাচ্ছেন। ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানকে সামনে রেখে ট্রাম্পের এই কূটনৈতিক উদ্যোগ বিশেষ নজর কেড়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বুধবার (১৮ জুন) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়েছেন, মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়ার কথা উঠে এসেছে। মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারত এখন থেকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুদ্ধকে ‘প্রক্সি ওয়ার’ হিসেবে নয়, বরং সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করবে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। মোদী এই হামলার পর ট্রাম্পের কাছ থেকে শোকবার্তা পেয়েছিলেন।

ফোনালাপে মোদী ‘অপারেশন সিদুঁর’ নামের সামরিক অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং পাকিস্তানের অনুরোধে নেওয়া যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ট্রাম্পকে অবহিত করেন। এছাড়াও মোদী আগামী কোয়াড সম্মেলনের জন্য ট্রাম্পকে ভারতে আমন্ত্রণ জানান, যা ট্রাম্প উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে, টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায় ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ওয়াশিংটনে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন আমন্ত্রণ বিরল এবং এটিকে পাকিস্তানের ‘ডি-ফ্যাক্টো’ শাসক হিসেবে মুনিরের স্বীকৃতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের পক্ষে ইসরায়েলের অবস্থান নিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তখন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিরোধিতার আশঙ্কা কমাতে এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের নাজুক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের কাছে তাদের নতজানু করে তুলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা কাজে লাগাতে চাইছে।

তবে পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরান আক্রমণকে নিন্দা জানিয়েছে এবং মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে ভবিষ্যতের সংকটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে ইরানের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকিকে পাকিস্তান সরকার অস্বীকার করেছে।

জেনারেল মুনির ধর্মীয়ভাবে কট্টরপন্থী হলেও, প্রবাসী পাকিস্তানিরা তাকে “ইসরায়েলপন্থী” বলেও মন্তব্য করেন। মুনির যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থী লবিগ্রুপ AIPAC-এর এক সভায় উপস্থিত হয়েছেন, যেখানে তার সফরের আয়োজনও করেন পাকিস্তানি-মার্কিন ব্যবসায়ী সাজিদ তারার। সাজিদ তারার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং “American Muslims for Trump” সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।

সাজিদ তারার মোদিকে প্রশংসা করেছেন এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে কথা বলেছেন। তবে প্রবাসী পাকিস্তানিরা ট্রাম্প-মুনির মধ্যাহ্নভোজের পেছনে তারার মূল ভূমিকা থাকার কথাও বলছেন। তারার মুনিরকে প্রবাসী পাকিস্তানির “সত্যিকারের রাষ্ট্রদূত” হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে এই সব ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্প ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানকেও নিজেদের স্বার্থে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে এই দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে আমেরিকা।

এম.কে.

×