গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ কিছুটা প্রশমিত হতে চলছে বর্ষার স্নিগ্ধ আমেজে। প্রতিদিন কোনো না কোনো সময়ে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় প্রকৃতি ও মানবকুলকে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ কার না ভালো লাগে। বাদল দিনের স্বচ্ছ গ্লাসে চোখ আটকালে উঁচু উঁচু ভবনের ছাদে দেখা যায় মেঘবালিকারা দল বেঁধে ভিজছে। যেন নির্মল আনন্দের এক উচ্ছ্বাস বয়ে যায় তাদের ভিতরে। শিশু থেকে কিশোর সবার মাঝেই থাকে অভিন্ন ছন্দ। তখন খুব মনে পড়ে নিজের দেখা নব্বই দশকের কথা। বৃষ্টির দিনে সবার হাতে হাতে ছাতা। একঝাক তরুণী ছুটে চলত স্কুলের পথে। আর বৃষ্টি ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। বর্ষা সবসময়ই ছাতার অবাধ্য হয়ে গতরখানি ভিজিয়ে দিয়ে যেত। ভেজা শরীরে ক্লাস করতে করতে পোশাক শুকিয়ে যেত। ছুটি শেষে আবার দল বেঁধে ছুটতাম মাটির পথ ধরে। যাওয়ার সময় ছাতাটা হয়ে যেত গুরুত্বহীন। বইয়ের ব্যাগ পলিথিনে পেঁচিয়ে শুরু হতো কাক ভেজার প্রতিযোগিতা। তখন গ্রামে শহরের আঁচ লাগেনি। কখনো কখনো হাঁটু অবধি মাটির নিচে গেরে যেত। বর্ষা ও কাদায় মাখামাখি হয়ে ফিরতাম ঘরে। বইয়ের ব্যাগ রেখে আবার নেমে পড়তাম পুকুরের পানিতে। সে কি নির্মল ছন্দ! পানির মধ্যে নেমে অনুভব করতাম রিমঝিম বৃষ্টি ধারা। এখনো বর্ষাভেজা দিনগুলোতে মন ছুটে যায় নব্বইয়ের স্মৃতিপটে। তবে এখন শহর ও গ্রামের মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই বললেই চলে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আঁকাবাঁকা সরুর মতো যতদূর চোখ যায় শুধু পাকা রাস্তা। গ্রামে ও শহরে যারা টিনের চালের নিচে বসবাস করে তারা জানে বৃষ্টির শব্দ তৈরি করে এক অদ্ভুত মূর্ছনা। বর্ষাকাল মূলত সবারই পছন্দ। তবে কাদা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ফ্যাশনাবল থাকার পাশাপাশি আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করা জরুরি। আর সঠিক ফ্যাশন বেছে নিতে পারলে বর্ষাকালে আপনি থাকতে পারবেন আকর্ষণীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্ষায় কোন ধরনের পোশাক আরামদায়ক ও উপযুক্ত।
বর্ষার পোশাক
বর্ষার পোশাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কাপড়ের ধরন। বৃষ্টিতে সুতি কাপড় এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এটি সহজে শুকাতে চায় না। পলিয়েস্টার, সিনথেটিক, রেয়ন, নাইলন বা ব্লেন্ডেড ফেব্রিক বৃষ্টির জন্য ভালো বিকল্প, কারণ এগুলো হালকা এবং দ্রুত শুকিয়ে যায়। জর্জেট, সিল্ক, হাফসিল্ক, লিনেন এবং মিশ্র সুতার কাপড়ও হতে পারে আরামদায়ক। বৃষ্টির দিনে গাঢ় রঙের পোশাক পরতে পারেন, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে। বৃষ্টির দিনে পোশাক নির্বাচনের সময় আরাম এবং দ্রুত শুকানোর বিষয়কে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বর্ষায় আজকাল টিনএজ মেয়েরা সাধারণত টপ, কুর্তায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্যাজুয়াল লুক পেতে প্রিন্টেড টি-শার্টের সঙ্গে ডেনিম প্যান্ট পরতে পারেন। এ ছাড়া বর্ষা উপযোগী কাপড়ের কুর্তি ও লেগিংসও বেছে নিতে পারেন। বর্ষাকালে রাস্তার কাদা-পানি থেকে রেহাই পেতে একটু কম দৈর্ঘ্যরে পোশাক পরাই ভালো। স্টাইলিশ লুকের জন্য ডেনিম ক্রপড জিন্স, প্লেইন বা প্রিন্টেড পালাজ্জো বেশ মানাবে। গ্লামারস্ লুক পেতে কাফতান, টিউনিক ও জমকালো অথচ হালকা ফেব্রিকের ড্রেস এ ঋতুতে বেশ আকর্ষণীয় লাগবে। তবে শাড়িও এ সময়ে ভিন্ন নান্দনিকতা তৈরি করে।
রং বাছাইয়ে সতর্কতা
বর্ষায় হালকা রঙের পরিবর্তে গাঢ় রং বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে যেসব রং প্রাধান্য পেতে পারে নেভি ব্লু, গ্রে, ডিপ পার্পল, অলিভ গ্রিন। বর্ষার ছন্দে পোশাকেও আনুন তাজা ছোঁয়া। ময়লা যাতে সহজে বোঝা না যায়, সেজন্য উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙের পোশাক বেছে নিন।
কোথায় পাবেন এবং দরদাম
আজকাল বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে যেকোনো সাধারণ মার্কেটেও পেয়ে যাবেন বৃষ্টি উপযোগী পোশাক। বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, গাউছিয়া, নিউমার্কেট ও অন্যান্য মার্কেট থেকে টপ বা কুর্তা কিনতে পারবেন ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই। আর বটম কালেকশন পেয়ে যাবেন পাঁচশ থেকে এক হাজারের মধ্যে। রঙ বাংলাদেশ, লা-রিভ, আড়ং, কে ক্র্যাফটসহ বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউস থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী বর্ষাকালীন নান্দনিক পোশাক। কাপড়ের মানভেদে দামে থাকতে পারে কিছুটা তারতম্য।
বর্ষায় ফ্যাশন মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং সেটা হওয়া উচিত ব্যবহারিক ও আরামদায়ক। হালকা কাপড়, গাঢ় রং, ক্রপড পোশাক আর স্মার্ট এক্সেসরিজ এই ছোট ছোট টিপসগুলো মেনে চললে বর্ষাকালের ফ্যাশন হয়ে উঠতে পারে পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত, স্টাইলিশ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
বর্ষা মানে প্রকৃতির এক নতুন রঙের উৎসব। আকাশের মেঘলা সৌন্দর্য আর বৃষ্টির নরম ছোঁয়ার মাঝে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার সময়। ফ্যাশন সচেতন নারীরা জানেন, প্রতিটি ঋতুর আলাদা স্টাইল স্টেটমেন্ট আছে, আর বর্ষা তার মাঝেই এক ভিন্ন ধরনের আবেদন রাখে।
বর্ষাকাল মানেই যে ফ্যাশন থেকে বিরতি, এমনটা একেবারেই নয়। বরং একটু পরিকল্পনা করে পোশাক নির্বাচন করলে বর্ষাতেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনবদ্য ও নজরকাড়া। মনে রাখবেন, ফ্যাশন মানে শুধু সাজ নয় এটা আপনার মুড, আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন।
প্যানেল
