ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার? জানুন আপনার আইনি করণীয়

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১১ জুন ২০২৫

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার? জানুন আপনার আইনি করণীয়

ছবি: সংগৃহীত।

হঠাৎ যদি কেউ জানতে পারেন, তার নামে একটি মামলা দায়ের হয়েছে—যার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, এমনকি মামলার উল্লেখিত তারিখে তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন না, তাহলে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া যায় তিনি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং বুঝে উঠতে পারেন না কী করবেন।

আইনজীবীরা বলছেন, মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলার শিকার হলে প্রথমে জানতে হবে মামলা কোথায় দায়ের হয়েছে—থানায় নাকি আদালতে। যদি থানায় এফআইআর হয়ে থাকে, তবে যত দ্রুত সম্ভব আইনি পরামর্শ নিয়ে জামিন নেওয়া উচিত। যদি আদালতের মাধ্যমে মামলা হয় এবং ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি হয়ে থাকে, তাহলে গ্রেপ্তার এড়াতে দ্রুত জামিন নিতে হবে।

যদি মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন থাকে—যেমন পুলিশ, ডিবি বা পিবিআই তদন্ত করছে, তবে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও প্রমাণসহ তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তদন্তাধীন অবস্থায় সাধারণত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় না। তদন্তের উদ্দেশ্য শুধু ঘটনার সত্যতা যাচাই।

যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত ঘটনাস্থলে মামলার তারিখে না থাকেন, তাহলে সেটি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। মোবাইল কল রেকর্ড, লোকেশন ট্র্যাক, হাসপাতাল বা অন্য কোনো স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ কিংবা টিকিট—সবকিছুই হতে পারে নির্দোষ প্রমাণের ভিত্তি।

মামলার বিচারিক পর্যায়ে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ডিসচার্জ আবেদন করতে পারেন। যদি প্রাথমিক চার্জ গঠনের আগে উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়, তাহলে আদালত অভিযুক্তকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। বিচার চলাকালীনও নিজের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ থাকে।

যদি আদালত অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করে, তাহলে মিথ্যা মামলার দায়ে অভিযোগকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পাল্টা মামলা করা যায়। যেমন: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী, প্রমাণিত মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ৬ ধারা অনুযায়ী, প্রমাণিত মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে আদালত স্বপ্রণোদিত বা আবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারেন। পেনাল কোডের ২১১ ধারা অনুযায়ী, যে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করলে এবং তা প্রমাণিত হলে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

মিথ্যা মামলা যে কারও জীবনে এক অভিশাপ হতে পারে। তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। ভয় না পেয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললেই সম্ভব হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়া এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

সূত্র: https://h1.nu/147MN

মিরাজ খান

×