ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ইন্টারভিউয়ের কমন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইন্টারভিউয়ের কমন প্রশ্ন ও উত্তর

.

রকমভেদে বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউতে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করা হলেও কিছু বিষয় থাকে বলতে গেলে একই। এ উত্তরগুলো ইন্টারভিউ বা ভাইভা বোর্ডে হুবহু বলতে পারলেই যে ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, বেলা শুনছ’- গেয়ে উঠবেন, তা কিন্তু নয়। এ রকম সাধারণ কিছু চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আজকের আলোচনা-
ইন্টারভিউ নাকি ভাইভা?
ইন্টারভিউ আর ভাইভার মাঝেও অল্পবিস্তর ফারাক রয়েছে। ইন্টারভিউ বলতে আগের দিনের রাজা বা এ রকম মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ঘটনাকে বুঝাতো। যেখানে ভাইভা বলতে সাধারণ যে কোনো মৌখিক পরীক্ষাকেই বলা হত। এখন অবশ্য দুটোই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে ভাইভা কিংবা ইন্টারভিউ, যাই বলি না কেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন ও উত্তরগুলো ইংরেজিতে দিতে হয়, যার জন্য প্রয়োজন স্পোকেনে শক্ত দখল। ইন্টারভিউয়ের কিছু কমন প্রশ্ন এবং এর উত্তর নিয়েই এই আলোচনা:
১। আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন? 
যে প্রশ্নটি সব ইন্টারভিউতে আপনাকে মোকাবিলা করতে হবে তা হলো নিজের পরিচয়। চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কমন। শুরুতেই সাধারণত এই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রশ্নটিকে সহজ মনে করে অগোছালোভাবে উত্তর দিলে হবে না। ‘নিজের সম্পর্কে বলুন’ প্রশ্নটির উত্তর থেকে আপনার আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ ও কমিউনিকেশন স্কিল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 
এভাবে উত্তর দেবেন: নিজের নাম, পড়াশোনা, পূর্ববর্তী কর্মস্থল বলার পাশাপাশি বলতে পারেন নিজের শখ, প্যাশন, বিভিন্ন স্কিল আর এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিসের টুকিটাকি। তাহলে একটা ভালো ইমপ্রেশন তৈরি হবে। একেবারেই ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। দিনশেষে এটা শুধুই একটা পরীক্ষা, এর বেশি তো কিছু নয়। মনোবল দৃঢ় রেখে স্মিতহাস্যে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে থাকবেন।
২। আপনার দুর্বল দিকগুলো কী?
এই প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনি আপনার দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে অবগত কিনা এবং কীভাবে তা কাটিয়ে উঠবেন, তা যাচাই করা।
বলা যাবে না: এই প্রশ্নের উত্তরে এমন কোনো দুর্বলতার ব্যাপারে বলবেন না যেটা শুধরে নেয়া যায় না। যেমন আপনি বলে বসলেন, আমি প্রখরমাত্রার বদমেজাজি। এটা বললে আপনার ব্যাপারে নেগেটিভ মনোভাব তৈরি হবে। 
যেভাবে উত্তর দেবেন: অনেকভাবেই বলতে পারেন। যেমন- বলা যেতে পারে, ‘আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কম্পিউটার সায়েন্স। তবে প্যাশনের ফিল্ড দাবা আর ইতিহাস। এই দুটার মধ্যে সামঞ্জস্য করতে মাঝেমধ্যে একটু সমস্যায় পড়ি আমি। তবে চেষ্টা করছি সেটা ঠিক করে নেয়ার।’ এবারের উত্তরটা কিন্তু দুর্বলতাই বোঝালো। কিন্তু এটা শুধরানোর এবং ততটা খারাপ দুর্বলতাও না যেটার জন্য আপনাকে বাদ দিয়ে দেবে। সঙ্গে আপনি এটাও বলে রাখলেন যে, আপনি আপনার এই দুর্বলতাটি শুধরে নিতে চাইছেন। তাই এই উত্তরটা পরীক্ষকদের মনে ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করার সম্ভাবনাই বেশি।
৩। আপনার সবচেয়ে বড় শক্তিশালী গুণ কী?
নিজের সম্পর্কে কতটুকু ইতিবাচক এবং আপনি কোন কোন বিষয়ে দক্ষ, তা জানতে পারা যায় এই প্রশ্নের উত্তর দ্বারা। উত্তর দেওয়ার সময় ভেবে-চিন্তে নিজের গুণের কথা প্রকাশ করুন। যেমন: আমি যে কোনো কাজ নিখুঁতভাবে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করি। পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে সামনে এগিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। কোম্পানি সাধারণত এমন প্রার্থী খোঁজে যারা ৩টি কাজ ভালোভাবে করতে পারে এবং সেগুলো হলো আয় বাড়ানো, সময় বাঁচানো এবং ব্যয় কমানো।
৪। পাঁচ/দশ বছর পর নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
যেভাবে বলবেন: এই প্রশ্নের উত্তরে মূলত সেই কোম্পানির বড় কোনো পদে, বড় কোনো দায়িত্ব সামলাতে চান এমন উত্তর কাম্য। এ ছাড়া আপনার যদি বিশেষ কোনো ক্যারিয়ার গোল থাকে সেটি বলতে পারেন।
৫। কেন আমরা আপনাকে হায়ার করব?
একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে অন্যভাবেও করা হতে পারে- আপনি কেন নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের যোগ্য মনে করেন? চাকরির ইন্টারভিউ এর এই প্রশ্নের উত্তরে যদি প্রশ্নকর্তা সন্তুষ্ট থাকেন তা হলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন অনেক বেড়ে যাবে ঠিক তেমনি অসন্তুষ্ট হলে সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
যেভাবে উত্তর দেবেন: এই প্রশ্নের উত্তরে আপনার নিজস্ব যোগ্যতাগুলো ন¤্রভাবে ও সূচারুরূপে তুলে ধরবেন। কেননা এটাই পুরো ভাইভার ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট। নিজের স্কিলগুলো বলুন, সঙ্গে এটাও বলুন কীভাবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ একটা কোম্পানি তখনই আপনাকে হায়ার করবে যখন তারা দেখবে আপনি তাদের অগ্রযাত্রায় সাহায্য করতে পারবেন এবং তাদের মিশন-ভিশনের সঙ্গে আপনার কর্মপন্থা মিলে যায়।
৬। আমাদের জন্য আপনার কোনো প্রশ্ন আছে?
এর উত্তরে যদি আপনি বলেন কোনো প্রশ্ন নেই, তাহলে বোঝাবে আপনি কম আগ্রহী তাদের ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে ভালো অ্যাপ্রোচ হলো তাদের ফলো-আপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। কবে রেজাল্ট দিতে পারে, তার সম্ভাব্য তারিখ বা আপনি চাকরিতে যোগদান করলে খুঁটিনাটি কোন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারেন, যেগুলো রিক্রুটমেন্ট পোস্টে ছিল না এসব। আবার দারুণ একটা কাজ হবে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন তাদের কোম্পানির অন্য কোনো সেক্টরে কাজের সুযোগ আছে কিনা। এটা বোঝায় আপনি তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এবং আপনি তাদের সম্পর্কে জেনে এসেছেন। তাই এই সুযোগ একদম মিস করবেন না। এসব বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আর ভাইভা কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ডে ঘাম ছুটবে না। মার্জিত ভাষায় উপযুক্ত উত্তরের মাধ্যমে পরীক্ষককে ইম্প্রেস করতে পারলেই কিন্তু চাকরিটা আপনার হাতের মুঠোতেই। দারুণ পারফরমেন্সের মাধ্যমে মনমতো ভাইভা দিয়ে পছন্দের চাকরিটা বাগিয়ে নিন-এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

 

×