ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলের বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:০০, ২৭ জুলাই ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলের বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু

ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার একটি এয়ারড্রপ (বিমান থেকে সহায়তা ফেলা) কার্যক্রম চালিয়েছে। এই সহায়তা কার্যক্রমে আটা, চিনি ও ক্যানজাত খাদ্যসহ সাতটি প্যাকেট ফেলা হয়েছে।

রবিবার সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) জানায়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এবং কোগাট-এর (গাজায় সহায়তা নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা) নেতৃত্বে এই সহায়তা ফেলা হয়।

এড্রপের একটি ভিডিও ইসরায়েল সেনাবাহিনী প্রকাশ করলেও তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।

ইসরায়েল আগে থেকেই বলেছিল, তারা জাতিসংঘের ত্রাণবাহী যানবাহনকে প্রবেশের জন্য মানবিক করিডোর খুলতে প্রস্তুত।

গাজার দুই মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ সীমিত হওয়ার কারণে সেখানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজায় ‘ইচ্ছাকৃত দুর্ভিক্ষ’ সৃষ্টি করা হচ্ছে—এই অভিযোগ ‘মিথ্যা’।

শনিবার রাতেই IDF জানিয়েছে, তারা গাজায় মানবিক সহায়তার বিষয়টি উন্নত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে "মানবিক বিরতির" জন্য প্রস্তুত।

তারা আরও জানিয়েছে, গাজায় একটি পানিশোধন প্লান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে, যা প্রায় ৯ লাখ বাসিন্দার উপকারে আসবে।

ইসরায়েল মার্চ মাসের শুরুতে গাজায় সবধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং মে মাসে নতুন শর্তসাপেক্ষে কিছুটা সরবরাহ শুরু করে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের সমর্থনে গাজায় কাজ শুরু করে Gaza Humanitarian Foundation (GHF)।

GHF কাজ শুরু করার পর থেকেই ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিয়ত নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব হতাহতের জন্য অধিকাংশ সময়ই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি দায়ী। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা শুধুমাত্র ‘সতর্কতা হিসেবে’ গুলি ছোঁড়ে এবং মৃত্যুর সংখ্যা অতিরঞ্জিত।

ইসরায়েল জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর উপর খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বলেছে, নিশ্চিত করতে হবে যেন ত্রাণ ‘হামাস’-এর হাতে না যায়।

এদিকে, জাতিসংঘ ও অনেক সাহায্য সংস্থা এবং ইসরায়েলের মিত্ররাও গাজায় খাদ্য সংকটের জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, “এটি একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।”

হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে অপুষ্টিতে অন্তত ১২৫ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

শনিবার ইসরায়েল একটি জর্ডান-আমিরাত পরিকল্পনায় সম্মত হয়, যেখানে যুক্তরাজ্যের সমর্থনে গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার কথা বলা হয়। তবে অনেক ত্রাণ সংস্থা বলছে, এটি গাজাবাসীর ক্ষুধা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “বিমান থেকে সহায়তা ফেলা ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং সঠিকভাবে না হলে এটা ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে।”

তিনি জানান, জর্ডান ও মিশরে তাদের কাছে ৬,০০০ ট্রাকের সমপরিমাণ ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে যা গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।

গাজার কিছু বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, এভাবে বিমান থেকে সহায়তা ফেলার পদ্ধতি “ঝুঁকিপূর্ণ” এবং “গত বছর বহু দুর্ঘটনার কারণ হয়েছিল।”

উত্তর গাজার এক বাসিন্দা বলেন, “বিমান থেকে খাদ্য ফেলার সময় তা শিবিরের উপর পড়তে পারে এবং তাতে মানুষ আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

একজন মা বিবিসিকে বলেন, “আমরা কোনো খাবার বা পানি ছাড়া বেঁচে আছি। না রুটি, না খাবার, এমনকি পানি পর্যন্ত নেই।”

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জন অপহৃত হওয়ার পর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে গাজায় ৫৯,০০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

নোভা

×