ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশসহ কোন দেশের ওপর কত শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প?

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশসহ কোন দেশের ওপর কত শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প?

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এতে চলতি বছরের শুরুতে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।

এই ঘোষণা বিশ্ব অর্থবাজারে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক তিন সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে। জাপানের শেয়ারবাজারেও ধস নামে; টয়োটা মোটর কোম্পানির শেয়ার ৪% এবং হোন্ডা মোটরের শেয়ার ৩.৯% কমে যায়। মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েন ও দক্ষিণ কোরিয়ান ওনের মূল্যও পড়ে যায়।

ট্রাম্প ১৪টি দেশের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন— যার মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ। চিঠিতে তিনি সতর্ক করেছেন, কোনো দেশ যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তাদের বাড়ানো শুল্কের পরিমাণ যুক্ত করে আরও শুল্ক বসানো হবে।

চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, “আপনারা যদি শুল্ক বাড়ান, তাহলে আপনারা যত শতাংশ শুল্ক বাড়াবেন, সেটি আমাদের ২৫% শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে।” এই চিঠিগুলো ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ প্রকাশ করেন।

এই শুল্ক আলাদা; অর্থাৎ পূর্বঘোষিত গাড়ি, স্টিল কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের ওপর থাকা শুল্কের সঙ্গে এটিকে যোগ করা হবে না। ফলে, জাপানি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকবে, বাড়িয়ে ৫০% করা হবে না।

দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা আরও জোরদার করবে এবং ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা ‘অবশ্যিক শুল্ক কার্যকরের আগে সময় বাড়ানো’ হিসেবেই দেখছে। তবে জাপান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গত কয়েক মাসের অনিশ্চয়তা ও দীর্ঘ আলোচনার পর এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, আলোচনা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, “আমি বলব সময়সীমা কঠোর, তবে শতভাগ নয়। যদি তারা ফোন করে অন্য কোনো উপায়ে আলোচনা চায়, তবে আমরা শুনতে প্রস্তুত।”

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, “এই সিদ্ধান্ত হতাশাজনক, তবে এখনো আলোচনার সুযোগ আছে।”

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র—

  • তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান: ২৫%

  • দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া: ৩০%

  • ইন্দোনেশিয়া: ৩২%

  • সার্বিয়া, বাংলাদেশ: ৩৫%

  • কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড: ৩৬%

  • লাওস, মিয়ানমার: ৪০%

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই শুল্ককে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭% পণ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় শুল্কমুক্ত প্রবেশ করে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই শুল্কের আওতায় পড়েনি। তারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমঝোতা সম্ভব হবে।

একইসঙ্গে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর নেতাদেরও ট্রাম্প সতর্ক করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি এসব দেশ "আমেরিকাবিরোধী" নীতিতে যায়, তবে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক বসানো হবে। ব্রিকস গ্রুপে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ।

বিশ্ব বাজার যখন টালমাটাল, তখন ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্যে আরও বড় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

আবির

×