ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

কীভাবে হারিয়ে গেল ইসলামিক রাজ্যের রাজধানী বাগদাদ?

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৭ জুলাই ২০২৫

কীভাবে হারিয়ে গেল ইসলামিক রাজ্যের রাজধানী বাগদাদ?

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ইরাকের রাজধানী বাগদাদকে আমরা চিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত, বিস্ফোরণ-পীড়িত এক নগরী হিসেবে। তবে প্রায় ১৩০০ বছর আগে এই শহর ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপে—ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূতিকাগার, দৃষ্টিনন্দন এক নিখুঁত গোলাকার শহর, যাকে বলা হতো মাদিনাত আল-সালাম বা শান্তির শহর।

এই শহর গড়ে তোলেন আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল-মানসুর। তিনি একটি নতুন রাজধানী নির্মাণের পরিকল্পনা করেন, যেটি হবে তাঁর সাম্রাজ্যের ভৌগলিক কেন্দ্রস্থলে। টাইগ্রিস নদী ধরে ঘুরে ঘুরে একসময় তিনি পৌঁছান ছোট্ট এক গ্রাম—বাগদাদে। এই স্থান তাঁর পছন্দ হয় কারণ টাইগ্রিস নদী দিয়ে সহজেই চীন এবং ইউফ্রেটিস নদী দিয়ে সিরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা সম্ভব ছিল।

 

 

এরপর শুরু হয় বাগদাদ নির্মাণের মহাযজ্ঞ। ছাই দিয়ে আঁকা হয় শহরের গোল নকশা। এর ভেতরে ছিল দুটি বৃত্তাকার পরিভ্রমণ পথ, চারটি বিশাল দরজা, সবুজ গম্বুজওয়ালা প্রাসাদ এবং চারপাশ ঘেরা তিন স্তরের প্রতিরক্ষা প্রাচীর। তুলা ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে তিনি আগুন জ্বালিয়ে নকশাটি চিহ্নিত করেন—জ্বলন্ত আগুনের মাঝে জন্ম নেয় এক আগুনের শহর, যা পরিণত হয় শান্তির প্রতীক এক মহানগরীতে।

এই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় খলিফার প্রাসাদ, জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার ও আবাসিক এলাকা। বাগদাদ দ্রুতই হয়ে ওঠে ইসলামি জগতের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসতো মসলা, স্পেন থেকে কমলা, আর অনুবাদ হতো গ্রিক, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষার বিখ্যাত গ্রন্থ। এই অনুবাদের যুগকেই অনেক ইতিহাসবিদ বলেন ইসলামের সুবর্ণযুগ।

তবে, বাগদাদের সেই গৌরব অনেকটা হঠাৎই শেষ হয়ে যায় ১২৫৮ সালে। মঙ্গল শাসক চেঙ্গিস খানের পুত্র হালাকু খান আক্রমণ চালান বাগদাদে। এই আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় গোটা গোল শহর, পুড়ে যায় লাইব্রেরি, মসজিদ, প্রাসাদ। প্রাণ হারান লক্ষাধিক মানুষ। এই হামলার মধ্য দিয়েই পতন ঘটে আব্বাসীয় খেলাফতের, এবং শান্তির শহর বাগদাদ রূপ নেয় ধ্বংসাবশেষে।

আজ গোল শহর বাগদাদের কোনো দৃশ্যমান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই। কনস্ট্রাকশন গেম থেকে শুরু করে মডার্ন ডকুমেন্টারি পর্যন্ত অনেক জায়গায় এর কল্পিত রূপ দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবে শহরের সেই আসল নকশা এখন ইতিহাসের পাতাতেই বন্দি। সময়ের ধারায় গোল শহরের গণ্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে, তৈরি হয়েছে নতুন বাগদাদ, কিন্তু সেই প্রাচীন গোল শহরের গৌরব আজও মানুষের কল্পনায় এক বিস্ময়।

ছামিয়া

×