ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

যে কারণে ইরানে ব্যর্থ ইসরায়েল

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২৬ জুন ২০২৫

যে কারণে ইরানে ব্যর্থ ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত

 

ইরানে ১১ দিনব্যাপী টানা বোমাবর্ষণের পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা।

যুদ্ধ শুরুর আগে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের দুটি প্রধান লক্ষ্য—ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করা এবং সরকার পতন ঘটানো। কিন্তু কোনো লক্ষ্যই বাস্তবে পূরণ হয়নি বলে বিশ্লেষকদের দাবি।

পরমাণু কর্মসূচি ‘অক্ষত’

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মাটি ভেদকারী বোমা ফেলা হলেও, ইরান মূল ফিশনযোগ্য পদার্থ আগেই সরিয়ে ফেলেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে “ডিক্যাপিটেশন” বা মাথা কেটে ফেলার মতো কোনও কৌশলগত সাফল্য মেলেনি।

সরকার পতন নয়, বরং উল্টো সংহতি

ইসরায়েল ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে ‘জনগণের বিদ্রোহ’ উসকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বিপরীত ঘটে। সরকারবিরোধী অনেক ইরানিও রাষ্ট্রীয় পতাকার পাশে এসে দাঁড়ায়, কারণ তারা পুরো দেশকে আগ্রাসনের শিকার হিসেবে দেখেছে।

এভিন কারাগারে হামলা, রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে বোমা বর্ষণ এবং “ডুমসডে ক্লক” ধ্বংস—এসব প্রতীকী আক্রমণ ইরানি জনগণের মধ্যে ক্ষোভই বাড়িয়েছে, বিরোধিতা নয়।

বিশ্ব সমর্থনও মেলেনি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও, তা ছিল সীমিত। তিনি যুদ্ধকে সমর্থন না জানিয়ে শান্তিচুক্তির বার্তা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলও ইসরায়েলের দাবি—যেন ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে—তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ব আবার ফিরে গেছে সেই পুরোনো অবস্থানে: "পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কিন্তু পরমাণু কর্মসূচি থাকতে পারে"। ইরানও তাতে রাজি। এটি ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত এক ব্যর্থতা।

ইসরায়েলের বিপর্যয় ও ইরানের বিজয়

যদিও ইসরায়েল আকাশপথে আধিপত্য অর্জন করেছিল, তবুও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে তেলআবিবসহ বড় শহরগুলোতে আঘাত হানে। বিশাল ক্ষয়ক্ষতি, বহু হতাহত এবং অর্থনীতিতে স্থবিরতা তৈরি হয়। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদও প্রায় শেষ হয়ে আসে।

অন্যদিকে, ইরান যুদ্ধশেষেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন, আক্রমণের আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে কূটনৈতিক সুবিধা এবং ট্রাম্পের মাধ্যমে ইসরায়েলকে সতর্ক করানো—সব মিলিয়ে ইরান নিজেকে দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করেছে।

ইসরায়েল এই যুদ্ধে না পেরেছে লক্ষ্য পূরণ করতে, না পেরেছে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি জোগাড় করতে। বরং ইরানই বিশ্ব রাজনীতিতে সাময়িকভাবে বিজয়ী—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আঁখি

×