ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্প ও মাস্কের মধুর সম্পর্কে বিচ্ছেদ, যা বলছে মনোবিজ্ঞান

প্রকাশিত: ১০:০২, ৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:০৫, ৮ জুন ২০২৫

ট্রাম্প ও মাস্কের মধুর সম্পর্কে বিচ্ছেদ, যা বলছে মনোবিজ্ঞান

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির নাট্যমঞ্চে একসময় যারা ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র, সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রযুক্তি জগতের ধনকুবের ইলন মাস্ক—তাদের সম্পর্ক এখন একেবারেই ভাঙনের মুখে। এটা নিছক মতবিরোধ নয়, বরং এক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, যার পেছনে রয়েছে ক্ষমতার খেলা, আত্মঅহংবোধ, এবং প্রতিশোধের প্রবৃত্তি।

কয়েক সপ্তাহ আগেই হোয়াইট হাউজে দু’জনের তোলা একটি ছবি ভাইরাল হয়—ট্রাম্প বসে আছেন, মাস্ক দাঁড়িয়ে আছেন পেছনে, একেবারে প্রভাবশালী অবস্থানে। সেই দৃষ্টিপাত, শরীরী ভাষা—সব মিলিয়ে যেন ক্ষমতার এক মুকাবিলা।

শুরুটা হয়েছিল ঘনিষ্ঠতায়

ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মাস্ক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অপচয় কমানোর দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। সম্পর্কের সেই দিনগুলোতে তারা একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

কিন্তু সেই গাড়ি যখন হাইওয়েতে উঠল, তখনই শুরু হলো দ্রুতগতির সংঘর্ষের সম্ভাবনা। ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের দুর্ঘটনাটি ঘটল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

‘দুর্ঘটনা’র কারণ কী?

অনেকে বলছেন, এর সূচনা হয় টেসলার ব্যবসায়িক ধাক্কা থেকে। মাত্র এক প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ৭১% হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শেয়ারদর পড়ে যায়, শোরুমে হামলার ঘটনাও ঘটে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির মালিকদের ট্যাক্স ছাড় প্রত্যাহারের প্রস্তাব, এবং স্পেস-এক্স নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও সম্পর্কের চির ধরায় ভূমিকা রাখে।

কিন্তু সাবেক হোয়াইট হাউজ কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননের মতে, আসল ঘটনার সূচনা তখন হয় যখন ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিকল্পনা সম্পর্কে মাস্ককে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ব্যাননের ভাষায়, ‘সেই মুহূর্তেই সব বদলে যায়।’

ঘৃণা, বিতৃষ্ণা আর প্রতিশোধের মনস্তত্ত্ব

সম্প্রতি মাস্ক লিখেছেন, ‘এই বিশাল, দুর্নীতিপূর্ণ বাজেট বিল এক জঘন্য বিকৃতি। যারা এতে ভোট দিয়েছেন, লজ্জা হওয়া উচিত।’

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রতিক্রিয়া নিছক নীতিগত মতভেদ নয়—এ এক অন্তর্গত ‘disgust’ বা বিতৃষ্ণা। এটি এমন একটি মৌলিক আবেগ, যা মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে সংক্রমণ বা নৈতিক বিপদ থেকে। মাস্ক এখানে সামাজিকভাবে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন—যেন বলছেন, ‘এই লোকটি বিপজ্জনক, আমি আলাদা।’

এর পাশাপাশি আছে ‘contempt’ বা ঘৃণা, যা সম্পর্ক ভাঙনের সবচেয়ে বড় পূর্বাভাস। এটি আসে তখনই, যখন একজন আরেকজনকে সামাজিক বা নৈতিকভাবে আলাদা করে দেয়।

প্রতিশোধের মিষ্টতা

একটি ২০০৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ করলে, প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আমাদের মস্তিষ্কের আনন্দকেন্দ্র (dorsal striatum) সক্রিয় হয়। অর্থাৎ প্রতিশোধ আসলে আত্মসন্তুষ্টির জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য নয়।

মাস্কের ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থানকেও অনেকে দেখছেন এমন এক প্রতিশোধ হিসেবেই—একটি ক্ষুদ্র ‘অসম্মান’ বা ক্ষমতার সংঘর্ষ, যা দুই বড় ‘নারসিসিস্ট’ বা আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে সম্পর্ক ভাঙনের কারণ হয়েছে।

দুই ইগোর লড়াই

মনোবিজ্ঞান বলছে, আত্মমুগ্ধ (narcissistic) ব্যক্তিরা খুব সহজেই অপমান বোধ করেন—তা বাস্তব হোক বা কল্পিত। মাস্ক হয়তো ভেবেছেন, ট্রাম্প তার অর্জনকে খাটো করছেন রাজনৈতিক স্বার্থে। এবং সেখানেই ঘটে যায় বদলের সূচনা—সম্মান বদলে যায় অবজ্ঞায়।

তাহলে এবার কী হবে?

একদিকে ট্রাম্প দোষারোপ করছেন মাস্ককে ‘পাগল’ বলে, সরকারিভাবে চুক্তি বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন। অন্যদিকে মাস্ক নিজেকে তুলে ধরছেন এক স্বাধীনচেতা, সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি হিসেবে।

দুই পক্ষই নিজস্ব ব্র্যান্ড রক্ষা করতে চাইছেন। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি মূলত এক মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতার দ্বৈরথ।

সংক্ষেপে:

  • মাস্ক-ট্রাম্পের বন্ধুত্ব ভেঙেছে ক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার দ্বন্দ্বে।
  • মনোবিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে আছে ঘৃণা, বিতৃষ্ণা ও প্রতিশোধের আবেগ।
  • এই সম্পর্ক ভাঙন রাজনীতি নয়, বরং মানুষের মানসিকতার প্রতিফলন—যেখানে ইগোই চূড়ান্ত চালক।

 

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।

 

রাকিব

×