ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরাইলের সামনে দাঁড়াতে আরবদের ভয় কোথায়?

প্রকাশিত: ০২:৫১, ৩ জুন ২০২৫

ইসরাইলের সামনে দাঁড়াতে আরবদের ভয় কোথায়?

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরব, কাতার, মিশর, তুরস্ক—মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নামগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এই দেশগুলো। সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও কূটনৈতিক প্রভাব—সবকিছুতেই তারা একেকটি শক্তিধর রাষ্ট্র। কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যুতে এদের কার্যকারিতা প্রায় শূন্য। সাম্প্রতিক একটি ঘটনার পর বিশ্ববাসী আবারও প্রত্যক্ষ করলো—ইসরাইলের সামনে এই আরব দেশগুলোর মেরুদণ্ড কতটা দুর্বল।

রোববার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা ছিল পাঁচটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের—সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাঁদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরব লীগের মহাসচিবেরও। কিন্তু সফরের আগ মুহূর্তেই ইসরাইলি সরকারের বাধার মুখে পুরো পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় এ প্রতিনিধিদল।

ইসরাইলের এই একতরফা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ পদক্ষেপের জবাবে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত দুর্বল ও লোকদেখানো। একটি যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা শুধু এতটুকুই বলেন—ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন অবজ্ঞা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে এর বাইরে কোনো কার্যকর প্রতিবাদ বা পাল্টা কূটনৈতিক অবস্থান নেওয়ার কোনো প্রয়াসই দেখা যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এতটুকু ‘নিন্দা’ এখন একধরনের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর মধ্যে শক্তি নেই, নেই কার্যকারিতাও। অথচ সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি সামরিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত। কিন্তু এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়াটা তাদের রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিগত বছরগুলোতে মার্কিন প্রশাসন, বিশেষ করে ট্রাম্প সরকারের ইসরাইলপন্থী ভূমিকা আরব দেশগুলোকে কার্যত ‘চুপ’ করে দিয়েছে। তবে এখন সেই বাস্তবতা বদলেছে। ট্রাম্প নেই, পরিবর্তে ইসরাইল ও পশ্চিমা মিত্রদের সম্পর্কেও ফাটল দেখা দিচ্ছে। এ সুযোগে চাইলে আরব দেশগুলো ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে পারত।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা কি আদৌ তা চায়? বাস্তবতা বলছে, আজকের আরব রাজনীতিতে ফিলিস্তিনের গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে। ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাতে এখন ইসরাইলকে ‘শত্রু’ নয়, বরং ‘অংশীদার’ হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়ছে। ইসরাইল ও একাধিক আরব দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পর্যটন ও জ্বালানিখাতে একাধিক গোপন ও প্রকাশ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ফলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব বিশ্বের ঐক্য যেমন দুর্বল, তেমনি তাদের প্রতিবাদও বিবর্ণ। ইসরাইলের আগ্রাসনের সামনে দাঁড়াতে না পারা কেবল কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের সংকটকেও তুলে ধরে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—আরব বিশ্বের পরাক্রম কি কেবল মুখের বুলি? তারা কি নিজেরাই ফিলিস্তিনকে ইতিহাসের একটি ‘অসমাপ্ত অধ্যায়’ হিসেবে ফেলে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেছে?


ইসরাইলের সাহস বাড়ছে আরব বিশ্বের দুর্বলতার কারণেই। যারা শক্তি ও সামর্থ্য থাকার পরও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারে না, তাদের মৌনতা একপ্রকার আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছু নয়। আর এই আত্মসমর্পণ শুধু ফিলিস্তিনের নয়—গোটা মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক মর্যাদাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ফরিদ 

×