ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন দেশ ছাড়ছেন আমেরিকানরা? স্থায়ী হচ্ছেন কোন দেশে?

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ৩০ মে ২০২৫

কেন দেশ ছাড়ছেন আমেরিকানরা? স্থায়ী হচ্ছেন কোন দেশে?

ছবি: সংগৃহীত।

করোনাকালের পর থেকে আশ্চর্যজনক হারে বাড়ছে মার্কিন নাগরিকদের অন্য দেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা। বিশ্বজুড়ে যেখানে মার্কিন নাগরিকত্বকে অনেকেই “স্বপ্নের পাসপোর্ট” হিসেবে দেখেন, সেখানে খোদ মার্কিনিরাই দেশ ছেড়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে পরিবার নিয়ে থিতু হচ্ছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার’-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রে মার্কিন নাগরিকদের স্থায়ীভাবে বসবাসের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মার্কিনির সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজারে।

কেন বাড়ছে দেশত্যাগের এই প্রবণতা?
বেশ কয়েকটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে মার্কিন নাগরিকরা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে বিশ্লেষকদের মত।

  • জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে:

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িভাড়া, জমির দাম ও দৈনন্দিন ব্যয়বহুলতা গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অথচ বেতন সেই অনুপাতে বাড়েনি। ইউরোপের অনেক দেশে তুলনামূলকভাবে খরচ কম, স্বাস্থ্যসেবা ভালো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত—যা মার্কিনিদের আকৃষ্ট করছে।

  • রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসন্তোষ:

বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অনেক নাগরিক তাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকে সত্যিই দেশ ছেড়ে দেন। ওবামার আমলে ইউরোপে স্থায়ী হওয়া মার্কিনির হার ছিল ১১ শতাংশ, ট্রাম্পের সময় তা বেড়ে হয় ১৬ শতাংশ, এবং সাম্প্রতিক হিসাবে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে।

  • কর্মঘণ্টার ভার ও জীবনের ভারসাম্য:

যুক্তরাষ্ট্রে চাকরিজীবীরা বছরে গড়ে ১,৮১১ ঘণ্টা কাজ করেন, যা ইউরোপের গড় (১,৫৭১ ঘণ্টা) অপেক্ষা অনেক বেশি। ফলে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স’ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে অনেকের জন্য।

  • বর্ণবৈষম্য ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা:

২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন সমাজে বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে আফ্রিকান-আমেরিকানদের একটি বড় অংশ এই বৈষম্যের শিকার হয়ে ইউরোপে চলে যান।

  • অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা:

করোনা মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। সরকার ঋণের বোঝায় জর্জরিত, একের পর এক ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন, এবং নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ইউরোপকে বেছে নিচ্ছেন।

সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য: পর্তুগাল ও স্পেন
নতুন জীবনের সন্ধানে মার্কিনিরা ইউরোপে যেসব দেশকে সবচেয়ে বেশি বেছে নিচ্ছেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পর্তুগাল ও স্পেন। এই দেশগুলোতে সহজ রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যসেবার মান যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভালো বলেই মনে করছেন অভিবাসীরা।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ‘আমেরিকান ড্রিম’ এখন অনেক মার্কিন নাগরিকের কাছে ইউরোপের শহরগুলোতেই গড়ে উঠছে।

নুসরাত

×