বুলবুল
ফারুক আহমেদের জায়গায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ের নায়ক, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর অন্যতম রূপকার অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলেন, দেশের ক্রিকেটে কাজ করার যে কোনো সুযোগই তিনি লুফে নেবেন। কিন্তু নাজমুল হাসান পাপনের আগের বোর্ড কখনোই তাকে ডাকেনি। এবার এমন এক প্রেক্ষাপটে দায়িত্বটা পেলেন, যখন অক্টোবরের মধ্যেই বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন।
মাত্র চার মাসে কি করতে পারবেন তিনি? যেখানে বোর্ডের অন্যসব পরিচালক, সবাই পাপন এবং ফারুকেরই করা সেটাআপ। বরাবরই বিনয়ী আর ব্যকিত্বসম্পন্ন মানুষ বুলবুল জানিয়েছেনÑ সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে চান তিনি। দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতটাই তার কাছে সবার আগে,‘চেষ্টা করব, ক্রিকেটটা যাতে সবাই খেলতে পারে, যাতে সবার খেলা হয়। আমাদের যেন একটা স্টেটমেন্ট হয়, ক্রিকেটটা সবার জন্য। এরকম একটা কাজ শুরু করে দিয়ে যেতে চাই।’
সবাইকে এক জোট হয়ে ক্রিকেটকে ভিন্ন উচ্চতায় তুলতে কাজ করার আহ্বান জানান সাবেক এই অধিনায়ক,‘আমরা ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলছি। ভালো পারফরম্যান্স করছি। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে, মেয়েদের দল এশিয়া কাপ জিতেছে। আমরা আরও ভালো কিছু আশা করতে পারি এবং আশা করব। সেটার সামর্থ্য আমাদের আছে। এজন্যই বলছি, আমরা সকলে মিলে একটা দল, আমরা সকলে বাংলাদেশকে সাপোর্ট করি। চলুন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভিন্ন উচ্চতায় তুলতে একসঙ্গে কাজ করি।’ আকরাম খানের নেতৃত্বে ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ যে প্রথম বিশ্বকাপে খেলার (১৯৯৯) সুযোগ পায়, বুলবুল ছিলেন সেই দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০০ সালে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। ঢাকা স্টেডিয়ামে (মতিঝিলে) সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৪৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন বুলবুল। অনেক বছর ধরেই তিনি থিতু অস্ট্রেলিয়ায়। মাত্র আটদিন আগে বাংলাদেশে এসে শুক্রবার বিসিবি প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বুলবুল। বোর্ডের ১৬তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সর্বোচ্চটা দেওয়ার কথা বলেছেন ৫৭ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার,‘যেহেতু সময় কম... আমরা জানি টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনের হয়, ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টার। আমি একটা কুইক টি২০ ইনিংস খেলতে এসেছি এখানে। একটা ভালো টি২০ ইনিংস খেলব, যেটা আপনারা সবাই মনে রাখবেন।’ বলছিলেন তিনি।
বুলবুল যোগ করেন,‘একটা বড় দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্বটা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট না,‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশে কী ক্রিকেট আছে, সেটা আমরা ঘুরে দেখে চেষ্টা করব আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমি বিশ্বাস করি যে, শুধু ১১ জন ক্রিকেট খেলে না, দেশের সবাই ক্রিকেট খেলে। আপনারা (সংবাদমাধ্যম) খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য এবং ক্রিকেটের স্থায়িত্বের জন্য। আমি আশা করব যে আমরা একটা দল হিসেবে কাজ করব।’
বুলবুল জানান বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করবেন তিনি। সেই পরিকল্পনায় ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ পাবে অগ্রাধিকার,‘আমরা যে পরিকল্পনা করছি, এক নম্বর হচ্ছে আমাদের যে (আইসিসির) সহযোগী দেশের ক্রিকেটগুলো ছিল যেখানে শিখেছি, সেই আঙ্গিকে চেষ্টা করব বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করা বা একটা উপজেলার ছেলে কীভাবে ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মূল ধারায় আসতে পারে, সেই চেষ্টাটা করব।’
