ইতিহাস গড়ল PSG: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ইন্টারকে ৫-০ বিধ্বস্ত

২০২৫ সালের ৩১ মে, মিউনিখের আলিয়ানজ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন (PSG) ইন্টার মিলানকে ৫-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। এই জয় শুধু PSG-এর জন্য ঐতিহাসিক নয়, বরং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানে বিজয়ের নতুন রেকর্ডও স্থাপন করেছে।

এক ঐতিহাসিক প্রদর্শনী

মাত্র ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার দেজিরে ডোয়ে এই ম্যাচে অনন্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তিনি দুটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করে ইতিহাসে নাম লেখান—চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে একযোগে গোল এবং অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে। তাঁর পারফরম্যান্স এই ঐতিহাসিক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ম্যাচের গোলগুচ্ছ শুরু হয় আচরাফ হাকিমির ১২তম মিনিটের গোলে। এরপর ডোয়ে ২০ ও ৬৩ তম মিনিটে দুটি গোল করেন। দ্বিতীয়ার্ধে খভিচা খভারাত্সখেলিয়া এবং সেনি মায়ুলু যথাক্রমে ৭৩ তম ও ৮৬ তম মিনিটে গোল করে PSG-র আধিপত্য নিশ্চিত করেন।

লুইস এনরিকের কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব

প্রধান কোচ লুইস এনরিকে তার দ্বিতীয় মৌসুমে PSG-কে একটি সুসংগঠিত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং রক্ষণ-আক্রমণের দিক থেকে পরিপূর্ণ একটি দলে রূপান্তর করেছেন। কিলিয়ান এমবাপে, লিওনেল মেসি এবং নেইমারের মতো তারকাদের প্রস্থানের পরও তিনি দলকে পুনর্গঠন করে কৌশলগত পরিপক্বতা দেখান। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপীয় ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলেন, যা এর আগে কেবলমাত্র ২০১৫ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে সম্ভব হয়েছিল।

এক স্মরণীয় মৌসুমের পরিণতি

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে PSG ২০২৪–২৫ মৌসুমে একটি ঐতিহাসিক ট্রেবল সম্পন্ন করে—লিগ ১, ফরাসি কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এই কৃতিত্ব ফরাসি ক্লাবগুলোর ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল এবং প্রশংসনীয়, যা সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে মার্সেই অর্জন করেছিল।

ইন্টার মিলানের হতাশাজনক পারফরম্যান্স

ইন্টার মিলান ফাইনালে নিজেদের সেরা ছন্দে ছিল না। ফ্রান্সের ক্লাবটির বিপক্ষে তাদের রক্ষণভাগ বারবার ভেঙে পড়ে এবং আক্রমণভাগ পুরোপুরি নিষ্প্রভ ছিল। আগের ম্যাচগুলোতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখানো দলটি ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়।

সামনে দিগন্ত উন্মোচিত

এই জয় PSG-এর জন্য শুধু একটি শিরোপা নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনাও। তারুণ্যনির্ভর স্কোয়াড, কৌশলগত দৃঢ়তা এবং দলগত ঐক্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত এই দলটি ভবিষ্যতে ইউরোপীয় মঞ্চে আরও সাফল্য অর্জনের প্রত্যাশা জাগাচ্ছে।

২০২৫ সালের এই ফাইনাল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে—একটি রাত যেখানে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন তাদের ইউরোপীয় স্বপ্ন বাস্তব করে, এবং তা করেন এক অভূতপূর্ব ও বর্ণাঢ্য ভঙ্গিমায়।