‘ইনশাআল্লাহ্্ আমরা সফল হব’

১০ জুন ঢাকায় সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশের ফুটবলে যে উন্মদনা শুরু হয়েছে সেটি যেন তাতিয়ে দিলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। সোমবার সকালে ইংল্যান্ড থেকে ঢাকা এসে বিকেলেই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গী হয়েছেন দেশের ফুটবলের নতুন নিউক্লিয়াস। প্রবাসী যে তিন তারকাকে ঘিরে উন্মাদনা তার মধ্যে সবার আগে এসেছেন ফাহমিদুল ইসলাম। সব ঠিক থাকলে আজ রাতে আসছেন সামিত সোম। সকাল এগারোটা নাগাদ বিমানবন্দরে হামজাকে বরণ করে নেন ফেডারেশনের (বাফুফে) একাধিক কর্মকর্তা।

এ সময় হামজার বাবা ও মা তার সঙ্গে ছিলেন। সোজা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চলে যায় তাদের বহনকারী প্রাইভেট কার। সেখানেই এক ভিডিও বার্তায় সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইংলিশ লিগে এবারের মৌসুমে শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ! আমরা সফল হব।’ হোটেলে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বিকেলেই নতুন সাজে সজ্জিত ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নেমে পড়েন তিনি।   
হামজা বলেন, ‘দলের সঙ্গে দেখা করতে এবং দুটি বড় ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। ইনশা আল্লাহ! আমরা সফল হব। যাঁরা আমাদের সমর্থন করবেন, আশা করি তাদের সবার সঙ্গে দেখা হবে।’ লাল-সবুজ জার্সিতে হামজার অভিষেক হয়েছে  গত মার্চেই। তাতে কী! হামজার আগমন মানেই যেন বিশেষ কিছু। গত কয়েকদিনে সেটা ভালোভাবেই টের পাওয়া গেছে। এদিন বিমানবন্দরে সমর্থকদের ভিড়ও জানান দিয়েছে তেমন কিছু। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন হামজাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে। নরসিংদী থেকে ভোর ৪টায় রওনা দিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন আশিক নামের এক ফুটবলপ্রেমী,‘টিভিতে হামজার খেলা দেখেছি।

এবার (বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের) টিকিটও পাইনি। তাই কষ্ট করে এতদূর থেকে এসেছি। হামজাকে একবার দেখব বলে।’ গত ১৮ মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে। যে ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ। অসাধারণ নৈপুণ্যে ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন সেদিনই। তবে স্থানীয় ফুটবলাররা তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি, একের পর এক সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি স্ট্রাইকাররা। এবার গর্বের জার্সিতে ঘরের মাঠে তার অভিষেক নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল আগ্রহ।
হামজা দেশের মাঠে বুধবার ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে নাকি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে খেলবেন, তা নিশ্চিত নয় এখনও। দুদিন আগে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা ভুটানের বিপক্ষে হামজার খেলার সম্ভাবনা নিয়ে বলেছিলেন, সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে দেশের মাঠে তাকে খেলার অভিজ্ঞতা দিতে চান, কিন্তু এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের মতোই ভারত, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের পয়েন্ট ১ করে। সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে গ্রুপ টেবিলে শীর্ষে ওঠার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

এই দুই ম্যাচ সামনে রেখে ইতোমধ্যে তিনদিন প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার দ্বিতীয় দিনের অনুশীলন জামাল-ফাহমিদুলরা সারেন ম্যাচের ভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সোমবার তৃতীয় দিনে তাদের সঙ্গী হন হামজা। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অল্প হলেও সময় পাচ্ছেন এ তারকা। এর আগে গত বুধবার ইতালি থেকে ঢাকায় ফিরে ক্যাম্পে যোগ দেন ইতালির সিরি ডি’তে খেলা ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল ইসলাম। ২৬ জনের প্রাথমিক দলে থাকা আরেক প্রবাসী সামিত সোমের কানাডা থেকে আজ রাতে ফেরার কথা।
নিজ আঙিনায় হামজার অভিষেক ঘিরে কয়েক মাস ধরেই ব্যস্ত সময় পার করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এএসসি)। ঝাঁ-চকচকে নতুন চেয়ার, নতুন ফ্লাডলাইট, নতুন রংÑ নবরূপে সাজানো হয়েছে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত জাতীয় স্টেডিয়াম। সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট পেতে অনলাইনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। এক রাতেই বিক্রি হয়ে যায় সব টিকিট। আন্তর্জাতিক ম্যাচের নিরাপত্তা এবং সবকিছু ঠিকঠাক এগিয়ে নিতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাফুফে ও এনএসসি। দেশের ফুটবলে এমন উন্মাদনা কতদিন পর, মনে করা মুশকিল। এবার মঞ্চ রাঙানোর অপেক্ষায় হামজা, ফাহমিদুল, সামিতরা।