
ফিফা প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিরুদ্ধে গোলের পর হামজা চৌধুরীর বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, বুধবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে
যেমনটা চেয়েছিল বাংলাদেশ ঠিক তেমনই হয়েছে। ঘরের মাঠে হামজা চৌধুরীর রঙিন অভিষেক হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে যেটুকু খেলেছেন হামজা তাতে একাই একশ’ ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা সুপারস্টার। লাল-সবুজের মাঠে হামজার অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশও পেয়েছে কাক্সিক্ষত জয়। অর্থাৎ অতিথি ভুটানকে সহজেই ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের হয়ে অপর গোলটি করেন মিডফিল্ডার সোহেল রানা।
এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছে ইতালি প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামেরও। তার গতির ঝড় দেখেছে ঢাকা স্টেডিয়ামের দর্শকরা। হামজা চৌধুরী আর ফাহমিদুল ইসলামের গতির কাছে ম্যাচের শুরু থেকেই কুপোকাত হয়ে পড়ে ভুটান। প্রায়ই ভুটানের রক্ষণভাগ ভেঙে চুরমার হয়েছে। ম্যাচে ষষ্ঠ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে দর্শনীয় হেডে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন হামজা। বিরতির পর ৪৯ মিনিটে দলের জয় নিশ্চিত করা গোলটি করেন সোহেল। বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের গোল মিসের কারণে সেটা হয়নি।
খেলায় বাংলাদেশ উজ্জ্বল থাকলেও মাঠের বাইরে অব্যবস্থাপনা ছিল চরমে। হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে স্টেডিয়াম এলাকার ভেতরে ঢোকার যে ফটক, সেটি ভেঙে ফেলেন দর্শকরা। টিকিট নিয়েও অনেকে ঢুকতে পারছিলেন না। যে কারণে তারা অধৈর্য হয়ে পড়েন। আর তাই ফটক ভেঙে অনেক দর্শক ভেতরে ঢোকেন। সব মিলিয়ে মাঠের খেলায় বাংলাদেশ ভালো করলেও ম্যাচ ব্যবস্থাপনায় অস্বস্তি থেকেই গেছে।
অথচ ম্যাচটিতে হামজা-ফাহমিদুল খেলবেন কি না এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ জ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা হামজা ও ফাহমিদুল দুজনকেই একাদশে রাখেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা ফুটবলার হামজার গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে। সেই ম্যাচ ছিল ভারতের শিলংয়ে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো গোল করতে পারেনি। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। বুধবার বাংলাদেশের মাটিতে অভিষেক হয়েছে এই সুপারস্টারের। লাল-সবুজের মাটিতে গোল করে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন হামজা। ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট খেলেন হামজা। বিরতির পর তাঁকে উঠিয়ে নেন বাংলাদেশ কোচ।
এদিকে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যকার ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলের প্রধান ভেন্যু ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিরেছে আন্তর্জাতিক ফুটবল। দিনের হিসেবে যা ১৬৫৯ দিন পর। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর এই মাঠে আর প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল হয়নি। বুধবার দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘হোমে’ ফিরছে ফুটবল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে সংস্কার কাজ শুরু হলেও আগস্ট পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবল চলেছিল। এই ভেন্যুতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর।
তখন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফে। এরপর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি জাতীয় স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ জ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ করছেন। তিন বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশে কোচিং করালেও তার হোম অব ফুটবলে অভিষেক হয়েছে গতকাল। শুধু তাই নয়, শখ মোরসালি, মিতুল মারমাসহ আরও কয়েক ফুটবলারের জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক হয়েছে।
জাতীয় স্টেডিয়ামে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় গত বছর তিনেক বসুন্ধরা কিংসের কিংস অ্যারেনা বাংলাদেশের অলিখিত হোম ভেন্যু ছিল। জাতীয় স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক ভেন্যু হলেও অনেক ফুটবলারের কাছে এই মাঠ নতুন পরিবেশ। দফায় দফায় বাজেট বেড়ে ১৫৮ কোটি টাকাতে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ফ্লাডলাইট, অ্যাথলেটিক্স ট্র?্যাক, গ্যালারি, প্রেসবক্স সব কিছুতেই এসেছে নতুনত্ব। ফুটবলার ও সাংবাদিকদের পাশাপাশি দর্শকরাও নতুন স্টেডিয়ামের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় স্টেডিয়াম বাফুফে ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন যৌথভাবে ব্যবহার করে।
অ্যাথলেটিক্স ২০২৪ সাল থেকে জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে এই ভেন্যুতে। বাফুফে ২০২১ সালের পর থেকে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল আয়োজন করেনি। মাস কয়েক আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাইনাল ম্যাচ করেছিল এই ভেন্যুতে। জাতীয় নারী ফুটবল দল অবশ্য মাঝে বেশ কিছু দিন এখানে অনুশীলন করেছে।
এখন জাতীয় স্টেডিয়ামের পরিচিতি শুধু ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স হলেও এটা মূলত ক্রিকেটেরই। দুই দেশ একটি ভেন্যুতে প্রথম হোম ম্যাচ খেলার বিশেষ কীর্তিও হয়েছিল এখানে। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রথম হোম টেস্ট হয়েছে ঢাকার স্টেডিয়ামটিতে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টও এখানেই হয়েছে। শততম ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের সাক্ষীও এই জাতীয় স্টেডিয়াম। ২০১১ সালের ওয়ানডে ও ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধন; ১৯৮৫, ১৯৯৩ ও ২০১০ সালে এসএ গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের ভেন্যুও এই জাতীয় স্টেডিয়াম।
বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি অতীত এই স্টেডিয়ামের সঙ্গেই জড়িত।