ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জুলকার নাইন সায়ের

সুব্রতকে গ্রেফতার করিয়ে নেপালের জেলে পাঠানোর নেপথ‍্যে ছিলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র

প্রকাশিত: ০০:৩০, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:৩১, ১ জুন ২০২৫

সুব্রতকে গ্রেফতার করিয়ে নেপালের জেলে পাঠানোর নেপথ‍্যে ছিলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র

২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ অনুরোধে কোলকাতায় থাকা সন্ত্রাসীদের আটকের অভিযান শুরু হয়। তখন কোলকাতার সিআইডি কর্মকর্তা রাজিব কুমার, সুব্রত বাইনকে গ্রেফতারের জন্যে বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সুব্রত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ও সহায়তায় আলী মোহাম্মদ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে বলে জানিয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের।

গতকাল শনিবার নিজের ব্যাক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন সায়ের।

জুলকার নাইন সায়েরের দেওয়া পোস্টটি জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল।

২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ অনুরোধে কোলকাতায় থাকা সন্ত্রাসীদের আটকের অভিযান শুরু হয়। তখন কোলকাতার সিআইডি কর্মকর্তা রাজিব কুমার, সুব্রত বাইনকে গ্রেফতারের জন্যে বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সুব্রত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ও সহায়তায় আলী মোহাম্মদ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে।

বিডিআরের জঘণ‍্য হত‍্যাযজ্ঞের সময় সাবেক বিডিআর সদস‍্য ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা তোরাব আলী ভারতের পাঁচটি নম্বরে যোগাযোগ রক্ষা করে, ধারণা করা হয় এর একটি নম্বর ছিলো সুব্রত বাইনের, তোরাব আলীর ছেলে লেদার লিটনের সাথে সুব্রতর বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো, সুব্রত'র হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এসাইনমেন্টে সহায়ক ভূমিকা রাখে এই লিটন। সুব্রত বাইনের সাথে বিডিআরের ওই নারকীয় ঘটনার কোন যোগসূত্র আছে কিনা, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।

জানা গিয়েছে বিডিআর ঘটনার কিছুদিন পরই কোলকাতার সিআইডি কর্মকর্তা রাজিব কুমারের সাথে সুব্রত বাইনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সুব্রত ‘র এর সহযোগিতায় কোলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রাজিব কুমারের নামে একটি অভিযোগও দায়ের করে। রাজিব কুমার পুলিশের কর্মকর্তা হলেও তিনি IB (Intelligence Bureau) এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ভারতের আভ্যন্তরীণ ব‍্যুরোক্রেসিতে NIA ও IB বনাম RAW এর মাঝে সবসময়ই একটা শীতল প্রতিযোগিতা চলে। এ কারনে রাজিব কুমার, ‘র এর এ্যাসেট হবার কারনে সুব্রত বাইনকে এক প্রকার চাপের মাঝেই রাখতো।

কোলকাতা নিরাপদ না হওয়ায়, আগষ্ট ২০০৯ এ শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে ঢুকে যায় সুব্রত বাইন, সাথে ছিলো তার তৃতীয় স্ত্রী জামেনা বিবি। সুব্রত তার ব্যাক্তিগত গাড়ী নিয়ে নেপালে চলে যায় ও পূর্ব পরিচিত বিহারের এক সন্ত্রাসীর মাধ্যমে জাল নেপালি পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলে।

একই সময়ে রাজিব কুমারের STF (Special Task Force) টীম সুব্রত বাইনের দমদম এলাকার নারায়নপুরের ডুপ্লেক্স বাড়ী থেকে বাংলাদেশ হতে ভারতে পালিয়ে যাওয়া লেদার লিটনকে আটক করে এবং প্রায় ২৪দিন তাকে STF এর লালবাজার কার্যালয় রাখে, এরই মাঝে রাজিব কুমার জানতে পারে সুব্রত বাইনের গাড়ী নেপালের সীমান্তবর্তী শহরে দেখা গেছে। গোয়েন্দা তথ‍্যের ভিত্তিতে রাজিব কুমার সুব্রত বাইনের গাড়ী চালক রাজাকে গ্রেফতার করে এবং রাজার ফোনের মাধ্যমে সুব্রতের লোকেশন এবং নেপালে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।

পরিকল্পনা মাফিক সুব্রত কাঁকড়ভিটা বাজারে আসার সাথে সাথেই STF তাকে ধরে ফেলে আর ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সে নিজেকে নেপালি বলে দাবী করে চিৎকার করতে থাকে এবং নেপালি পুলিশ ও সাধারণ জনগণ ভারতীয় STF টীমের সদস্যদের মারপিট শুরু করে। পরবর্তীতে আরো নেপালি পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং STF সদস্যদের ছেড়ে দেয় কিন্তু সুব্রত বাইনকে পাবলিক ন্যুইসেন্স অফেন্সে ভদ্রপুর জেলে পাঠায়। তার কাছে পাওয়া নেপালি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

নেপালের ঝাপা জেলার এসপি নিজে সুব্রতকে রিমান্ডে নেয় ২১দিনের। এবং জাল পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র বানানোর অপরাধে সুব্রতর বিরুদ্ধে শক্ত মামলা হয়। সুব্রতকে ঝাপা জেলার জেলে রাখা হয়। সুব্রত টাকা দিয়ে নিজ সুবিধামতো ব‍্যবস্থা করে। সুব্রতর খোঁজ খবর নেয়ার জন‍্যে, একই সময় তার তৃতীয় স্ত্রী জামেনা বিবি স্থানীয় ইটোহরি মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন সুব্রতসহ ২০জনের খাবার জেলে পাঠাতো। ওই জেলের কর্তাদের সাথে সুব্রত সখ‍্যতা গড়ে এবং পাশাপাশি কিছু বিহারী বন্দীদের সাথে নিয়ে সে ৭৭ফুট দীর্ঘ একটি সুঁড়ঙ্গ তৈরি করে এবং একরাতে সুব্রত তার ১১ জন বিহারী সঙ্গী নিয়ে জেল থেকে পালিয়েও যায়।

বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা যায় গোপনে টিপ দিয়ে এসটিএফকে কাঁকড়ভিটা পাঠানো এবং সুব্রতকে গ্রেফতার করিয়ে নেপালের জেলে পাঠানোর নেপথ‍্যে ছিলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র। তাদের উদ্দেশ‍্য ছিলো সুব্রতকে ওই নির্দিষ্ট জেলে পাঠানো এবং সেখানে আটক ভারতীয় নাগরিকদের জেল থেকে ভাগিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া।

এই পরিকল্পনায় তারা সফল হয় এবং এর কিছুদিন পর সুব্রতকে কোলকাতার বালিগঞ্জের একটি বাড়ী থেকে ওই STF গ্রেফতার করে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠায়। আর এ সময় থেকেই সুব্রতর সাথে রাজিব কুমারের সুসম্পর্ক শুরু গড়ে উঠে। রাজিব কুমার ধীরে ধীরে সুব্রতকে কারাগারের অভ্যন্তরে সকল রকম সুবিধা প্রদান করতে শুরু করে।

ফুয়াদ

×