
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নে যেন হঠাৎ করে ভাঙন ধরেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনার ফলে বিশ্বজুড়ে স্টুডেন্ট ভিসা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারত ও চীন, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায়।
২৭ মে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে এক গোপন নির্দেশনায় বিশ্বব্যাপী সব মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে F ও J ক্যাটাগরির ভিসা (অ্যাকাডেমিক, ভোকেশনাল ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম) ইন্টারভিউ আপাতত স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে নতুন করে কোনও সাক্ষাৎকার বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যাচ্ছে না।
📱 সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং: ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিরে দেখা হবে
এই নির্দেশনার পিছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য হলো, আরও কঠোর ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে। বিশেষভাবে আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঘেঁটে দেখা হবে। তবে কী ধরনের পোস্ট বা কনটেন্ট "আপত্তিকর" বলে বিবেচিত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফলে ছাত্রছাত্রীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে — রাজনৈতিক মতামত, ব্যঙ্গাত্মক মিম বা ব্যক্তিগত পোস্টের কারণেও ভিসা বাতিল হতে পারে কি না তা নিয়ে।
🧑🎓 ভারত-চীনের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে:
-
🇮🇳 ভারত: ৩,৩১,৬২ জন
-
🇨🇳 চীন: ২,৭৭,৩৯৮ জন
-
🇰🇷 দক্ষিণ কোরিয়া: ৪৩,১৪৯ জন
এই প্রথমবার, ভারতীয় শিক্ষার্থী সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান থেকেও হাজার হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন, যাদের অনেকে দ্বিধায় পড়ে গেছেন।
🏛️ কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে?
বিদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য:
-
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (NYU): ২৭,২৪৭
-
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি: ২১,২৩৪
-
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি: ২০,৩২১
-
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি: ১৮,৪৩০
-
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি: ৭,৮০০
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক প্রতিভার উপর নির্ভরশীল। ভিসা স্থগিত হলে গবেষণা, ক্লাসরুম, ও ল্যাবসহ সব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
💬 শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া: "এই মানসিক চাপ আর সহ্য হয় না"
-
এক ভারতীয় MBA শিক্ষার্থী হার্ভার্ড থেকে বলেন, "প্রতিবার মনে হয় নতুন করে একটা নিষেধাজ্ঞা এলো। আমরা কোনটা মেনে চলবো?"
-
এক চীনা ছাত্রী বলেন, "ভিসা পেলেও যদি ডিগ্রি শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে দেয়, সেটা ভয়ংকর একটা ভাবনা।"
-
আরেক ভারতীয় ছাত্রী বলেন, "আমি এখন ইউকে বিকল্প হিসেবে ভাবছি। এই দুশ্চিন্তার জীবন আর ভালো লাগে না।"
💵 বৃহৎ আর্থিক ক্ষতি: ৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে যুক্তরাষ্ট্র
বিদেশি শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থী নয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে।
-
বছরে তারা যুক্ত করে $৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার
-
সহায়তা করে ৩ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি চাকরি
-
প্রযুক্তি খাত, ক্যাম্পাস, স্টার্টআপ থেকে শুরু করে নানা খাতে তাদের অবদান আছে।
🔍 "আমেরিকান ড্রিম" কি এবার রাজনীতির বলি হতে চলেছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক শিক্ষার গন্তব্য হিসেবে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। "ব্রেইন ড্রেইন", অর্থনৈতিক ক্ষতি, গবেষণায় ধাক্কা এবং বৈচিত্র্য হ্রাস—সব কিছুই এখন সম্ভাব্য পরিণতি।
আঁখি