ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির হাটে গরুর রাজত্বে কারা এগিয়ে? মাংস, দাম আর রঙে বাজিমাত করছে যে ৫ জাত

আ.ন.ম. রিসালাত আলিফ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৮, ৩১ মে ২০২৫

কোরবানির হাটে গরুর রাজত্বে কারা এগিয়ে? মাংস, দাম আর রঙে বাজিমাত করছে যে ৫ জাত

 

ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের কোরবানির হাটে শুরু হয়েছে গরুর পছন্দসই জাত বাছাইয়ের ধুম। আগে ক্রেতারা শুধু আকার বা দাম দেখেই গরু কিনতেন, কিন্তু এখন জাত, মাংসের গুণাগুণ, স্বাস্থ্য এবং পরিচর্যার দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, গরুর জাতভেদে দেহের গঠন, গোশতের পরিমাণ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য থাকে। এখন ক্রেতারা সচেতনভাবে এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে পশু বেছে নিচ্ছেন বলেই কোরবানির হাটে অঞ্চলভেদে বিশেষ জাতের গরুর চাহিদা বাড়ছে।

অধ্যাপক আজাদের তথ্যমতে, বাংলাদেশের কোরবানির বাজারে প্রায় ৫০% দেশীয় জাতের (নন-ডেসক্রিপটিভ) গরু সরবরাহ হয়, যেগুলোর ওজন সাধারণত ২০০-২৫০ কেজির মধ্যে থাকে। এর বাইরে অঞ্চলভেদে বিশেষ কিছু গরুর জাত ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে:

রেড চিটাগাং ক্যাটল (RCC) — চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে উৎপন্ন লাল রঙের মাঝারি আকারের এই জাতের গরু কোরবানির হাটে দারুণ জনপ্রিয়। শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও কাঙ্ক্ষিত ওজনের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 মিরকাদিম গরু — মুন্সীগঞ্জে উন্নয়নকৃত এই জাত কম চর্বিযুক্ত ‘লিন মিট’ গরুর জন্য পরিচিত। সাধারণত ২০০-৩০০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ঢাকার পুরান অংশের ভোক্তারা বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতারা এই জাত বেশি পছন্দ করেন।

পাবনা ক্যাটল — দুধের জন্য পরিচিত হলেও, পাবনা জেলার এই জাতের ষাঁড়গুলো কোরবানিতে বেশ জনপ্রিয়। এদের গড় ওজন ৪৫০-৫০০ কেজি এবং সাদা ও ছাই রঙের বাহারি গায়ের রঙ ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মাঝে এর চাহিদা বেশি।

নর্থ বেঙ্গল গ্রে (NBG) — বগুড়ার কাহালু ও সারিয়াকান্দিতে উন্নয়নকৃত এ জাত সাদা রঙের হলেও গলার অংশটি কালো। গড় ওজন আরসিসি’র মতোই। আকর্ষণীয় রঙ ও গঠনবৈশিষ্ট্যের কারণে দেশব্যাপী এর কদর বাড়ছে।

 সংকর জাত — দেশজ ও বিদেশি জাতের সংকরায়ণ থেকে উৎপন্ন গরুগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। উচ্চ ওজন এবং গঠনবৈচিত্র্যের জন্য অনেকেই এদের পছন্দ করেন।

মাংসে চর্বির উপস্থিতি মান ঠিক করে দেয় উল্লেখ করে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “যে গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি, সেই মাংস বেশি সুস্বাদু। এ দিক থেকে পাবনা ক্যাটল সেরা। তবে যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা চর্বিমুক্ত মাংস চান, তাদের জন্য মিরকাদিম গরু আদর্শ।”

বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক এলাকায় গরু কোরবানি হয় সমিতি বা যৌথভাবে। সাধারণত সাত অংশীদার প্রতিজন ১৫-১৬ হাজার টাকা করে ধরলে গরুর বাজেট দাঁড়ায় ১ লক্ষ টাকার আশপাশে। সে দামে সবচেয়ে ভালো জাত হিসেবে অধ্যাপক আজাদ আরসিসি এবং নর্থ বেঙ্গল গ্রে গরুকেই বেশি উপযোগী বলে মনে করেন।

অধ্যাপক আজাদ বলেন, “গরুর এই ভৌগোলিক বৈচিত্র্য দেশের পশুপালন খাতের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সহায়তা পেলে কোরবানির মৌসুম শুধু ধর্মীয় নয়, অর্থনীতিরও বড় উৎস হতে পারে।”

কোরবানির হাটে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং জাতভিত্তিক বৈচিত্র্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের গবাদিপশু খাত এখন আর শুধু পল্লী অর্থনীতির অংশ নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

মিমিয়া

×