
ছবিঃ সংগৃহীত
গতরাতে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই গাজা শহরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালকরা।
গাজা শহরের ফাহমি আল-জারগাউই স্কুলে বেইত লাহিয়ার শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে শিশুদেরসহ বহু মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের অনেকের দেহ আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে দুইটি শ্রেণীকক্ষ ধ্বংস হয়েছে, যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তারা সেখানে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের একটি "কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র" লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। IDF জানিয়েছে, ওই এলাকা সন্ত্রাসীরা ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষ এবং সেনাদের ওপর হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহার করছিল এবং তারা গাজার জনগণকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে।
ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্কুলের বড় একটি অংশ জ্বলছে, শিশুসহ দগ্ধ মরদেহের করুণ চিত্র এবং গুরুতর আহত বেঁচে যাওয়াদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
উত্তর গাজার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থাপক ফারিস আফানা বলেন, “ঘটনাস্থলে পৌঁছেই দেখি তিনটি শ্রেণীকক্ষে আগুন লেগেছে। সেখানে ঘুমিয়ে ছিল শিশু ও নারী। কেউ কেউ চিৎকার করছিল, কিন্তু আগুনের কারণে আমরা তাদের উদ্ধার করতে পারিনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে উত্তর গাজার হামাস পুলিশের তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ আল-কাসিহ, তার স্ত্রী ও সন্তানরাও রয়েছেন। অন্যদিকে, জাবালিয়ার একটি বাড়িতে চালানো আরেকটি হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ড. ফাদেল আল-নাইম। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলা সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এই দুটি হামলা গাজার উত্তর অংশে সম্প্রতি চালানো ব্যাপক ইসরায়েলি অভিযানগুলোর অংশ। IDF জানিয়েছে, তারা ৪৮ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
এদিকে, হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, গোষ্ঠীটি মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তবে উইটকফ রয়টার্সকে বলেন, তিনি যেটি দেখেছেন তা "সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য", এবং বর্তমানে আলোচনায় থাকা প্রস্তাবটি তার প্রস্তাব নয়।
এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যে পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে, তাতে দুই ধাপে ১০ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি এবং বিনিময়ে ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং শত শত দীর্ঘমেয়াদী ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি অন্তর্ভুক্ত।
বিবিসি ইসরায়েলি সরকারের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (ICRC) জানায়, খান ইউনিসে তাদের এক কর্মী এবং রাফাহের রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালের একজন নিরাপত্তাকর্মী নিজ নিজ বাসভবনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ICRC আবারো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলে, “গাজায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩,৯৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ১৬,৫০০ শিশু রয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা