
ছবি আলজাজিরা
গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং মানবিক সহায়তা অবরোধের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো করতে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিরা রবিবার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে মিলিত হয়েছেন। ‘মাদ্রিদ গ্রুপ’ নামে পরিচিত এই জোটের পঞ্চম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ২০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকের আগে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, “এই যুদ্ধের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং সহায়তার ওপর অবরোধ তুলে নেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্তের পর এখন আমাদের বিবেচনা করা উচিত, নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ যা কিছু দরকার তা আমরা করব এই যুদ্ধ থামাতে।”
গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধে খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, সম্প্রতি যে সামান্য পরিমাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা “সমুদ্রের ফোঁটার মতো”।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা বুধবার থেকে প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে, কিন্তু সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর মতে প্রয়োজন অন্তত ৫০০-৬০০ ট্রাক প্রতিদিন।
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, “আশা করি ইসরায়েল সরকার গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষ বন্ধ করবে। দুনিয়ার অনেক দেশ এটা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।”
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেল আত্তি বলেন, “ইসরায়েলি পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই মূল সমস্যা। তবে আমরা চাপ দিতে থাকব, যুদ্ধবিরতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
জার্মানির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্লোরিয়ান হান গাজার “অসহনীয়” মানবিক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক সমাধানের দাবি জানান।
এই বৈঠকটি জুনের ১৭ তারিখ নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের জাতিসংঘ সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ফ্রান্স ও সৌদি আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি গঠনমূলক উদ্যোগ নেবে।
মাদ্রিদের বৈঠকে আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। আল জাজিরার প্রতিবেদক হাশেম আহেলবারা বলেন, “এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। সদস্যরা সম্ভাব্য রাজনৈতিক পথ নিয়ে আলোচনা করছেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৫৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এসএফ