ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ০২:৪০, ২৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা স্থগিত করেছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনৈতিক ও একাডেমিক কাঠামোর ওপর বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে হার্ভার্ডকে বাধ্যতামূলকভাবে মিলিয়ে নেওয়ার এক গুরুতর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।


গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ডের নথিপত্র চাওয়ার বিষয়ে একটি আইনি টানাপোড়েন চলছিল। এক পর্যায়ে এই বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায়, তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP) সনদ বাতিল করা হয়েছে। এ সনদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে। হার্ভার্ড এখন আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না।

এই নিষেধাজ্ঞা মানে, বর্তমানে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত প্রায় ৬,৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে হয় অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে, নয়তো তারা তাদের বৈধ অভিবাসন মর্যাদা হারাবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপকে “অবৈধ” বলে উল্লেখ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেসন নিউটন বলেন, হার্ভার্ড তার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা ১৪০টির বেশি দেশ থেকে এসেছে এবং আমাদের ক্যাম্পাস ও জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই প্রতিহিংসাপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের শিক্ষাদান ও গবেষণার মিশনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে একবার মামলা করেছে—তাদের পাঠ্যক্রম, ভর্তি নীতিমালা ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও হার্ভার্ড আইনি পথে হাঁটবে।


আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি টিউশন ফি প্রদান করে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডের বার্ষিক টিউশন ফি ৫৯,৩২০ ডলার এবং থাকার খরচসহ পুরো ব্যয় প্রায় ৮৭,০০০ ডলার পর্যন্ত হয়। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব আয়কে কঠিনভাবে প্রভাবিত করবে।

২০১০ সালে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর হার ছিল ১৯.৭ শতাংশ; বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশে।


স্টকহোম থেকে আসা হার্ভার্ডের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী লিও গারডেন বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ড থাকবে না। আমাদেরকে এখন পণ্যের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।


ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির "উদারনৈতিক" ভাবমূর্তি এবং অভিবাসনপন্থী নীতির বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

এসএফ 

×