ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বনেতাদের হোয়াইট হাউসে ডেকে এনে কেন ‘র‍্যাগ’ দিচ্ছেন ট্রাম্প?

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৮, ২২ মে ২০২৫

বিশ্বনেতাদের হোয়াইট হাউসে ডেকে এনে কেন ‘র‍্যাগ’ দিচ্ছেন ট্রাম্প?

ছ‌বি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস — এক সময় বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য ছিল সম্মান ও সৌজন্যের প্রতীক। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যেন সেই ঐতিহ্য ব্যতিক্রমী এক মোড় নিয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিনিয়ররা যেভাবে জুনিয়রদের 'র‍্যাগ' দেন, ট্রাম্প যেন ঠিক সে পথেই হাঁটছেন। হোয়াইট হাউসে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের একের পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সাম্প্রতিক এক বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা সেই র‍্যাগিংয়ের শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হোয়াইট হাউসে আসেন রামাফোসা। ওভাল অফিসে শুরুতেই হাসিমুখে কথাবার্তা হলেও, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায় ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে। আলোচনার মাঝেই ট্রাম্প হঠাৎ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ নিয়ে একটি বিতর্কিত ভিডিও চালান—যেটি পরবর্তীতে বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থার মতে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি তিনি সংবাদপত্রের কিছু কাটিং পর্যন্ত হাজির করেন নিজের বক্তব্যকে জোরদার করতে।

ট্রাম্প বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক শ্বেতাঙ্গ কৃষক নিপীড়নের শিকার। তারা পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।” যদিও সিরিল রামাফোসা শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন, পরে কাতার থেকে প্রাপ্ত বিলাসবহুল বিমানের উপহার নিয়ে কৌশলে ট্রাম্পকে কটাক্ষ করতেও ভোলেননি।

এর আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের রূঢ় আচরণের শিকার হন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বৈঠকে তাঁকে এমনভাবে অপমানিত হতে হয় যে, খাবার না খেয়েই ওভাল অফিস ত্যাগ করেন তিনি।

একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিরও। হোয়াইট হাউসে প্রথম সফরে গিয়ে তিনি তখন চরম অস্বস্তিতে পড়েন, যখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের “৫১তম রাজ্য” বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথেও ট্রাম্পের বৈঠক খুব বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়নি। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমারেখা অতিক্রম করে ব্যক্তিগত আক্রমণের মতো মন্তব্য করে আলোচনার পরিবেশকে জটিল করে তোলেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, হোয়াইট হাউসের এসব ‘অস্বাভাবিক’ বৈঠক কেবল ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বেরই প্রতিফলন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ঐতিহ্যের জন্যও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্পের এই আচরণ অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের কাছেই এখন আতঙ্কের নাম — হোয়াইট হাউসের নিমন্ত্রণ মানেই যেন এক অজানা ‘র‍্যাগিং’-এর প্রস্তুতি।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=yll_WX_kYSQ

এম.কে.

×