
ছবি: সংগৃহীত
অবিরাম জ্বলছে ৪ হাজার বছরের শিখা, মুসলিম এই দেশটিকে কেন আগুনের দেশ বলা হয়?
ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি বিস্ময়কর দেশ আজারবাইজান। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ককেশীয় অঞ্চলের মধ্যে এটি বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। তবে দেশটি বিশ্বের কাছে পরিচিত ‘আগুনের দেশ’ নামে। কারণ এর বিভিন্ন অঞ্চলের মাটিতে হাজার বছর ধরে অবিরাম জ্বলছে আগুন। এই বিস্ময়কর উপাধির পেছনে রয়েছে এক প্রাকৃতিক রহস্য ও ইতিহাসের মিশেল।
বিশ্বের প্রথম অসাম্প্রদায়িক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত আজারবাইজান ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রাশিয়া, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, তুরস্ক, ইরান ও কাস্পিয়ান সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত এই দেশটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর এক অসাধারণ মিশ্রণ।
আজারবাইজানের মাটির নিচে রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত। এসব গ্যাস কখনো ভূপৃষ্ঠে ফেটে বেরিয়ে আসে এবং সেখানে আগুন ধরে যায়। দেশটির সবচেয়ে আলোচিত এমন স্থানটির নাম ইয়ানারদেগ, যার অর্থ ‘জ্বলন্ত পর্বতমালা’। কথিত আছে, এখানে প্রায় ৪ হাজার বছর ধরে অবিরাম আগুন জ্বলছে। বৃষ্টি, বাতাস কিংবা তুষারপাত—কোনো কিছুতেই নিভে না এই শিখা। শীতকালে এই দৃশ্য আরও মুগ্ধকর হয়ে ওঠে। আগুনের তাপে তুষারপাতের ফোঁটাগুলো মাটিতে পৌঁছানোর আগেই গলে যায়।
রাতের বেলায় ইয়ানারদেগে এই আগুনের শিখা তৈরি করে এক মায়াময় পরিবেশ। ফলে দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক প্রতিবছর ছুটে আসেন এই দৃশ্য দেখতে। রাজধানী বাকু থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই স্থানে কোনো বড় অবকাঠামো না থাকলেও একটি ছোট ক্যাফে আছে পর্যটকদের জন্য। তবে মূল আকর্ষণই হচ্ছে সেই চিরন্তন শিখা।
ইয়ানারদেগের আগুনের ইতিহাসও বেশ পুরনো। ১৩০০ শতকে বিশ্বখ্যাত ইতালীয় পরিব্রাজক মার্কো পোলো তার ভ্রমণকথায় ইয়ানারদেগের রহস্যময় আগুনের বর্ণনা দিয়েছিলেন। পরে বাণিজ্যপথ ধরে এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বজুড়ে আজারবাইজান পরিচিতি পায় ‘অগ্নিভূমি’ হিসেবে।
একসময় আজারবাইজানের বিভিন্ন জায়গায় এমন অগ্নিকুণ্ড দেখা যেত। কিন্তু ভূগর্ভস্থ গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের ফলে সেসব এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
আজারবাইজানের অগ্নিময় ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম আতেশগা অগ্নি মন্দির। ‘আতেশগা’ শব্দটি ফারসি, যার অর্থ ‘আগুনের ঘর’। বাকুর পূর্বদিকে অবস্থিত এই মন্দির একসময় ছিল অগ্নি উপাসক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়। ইয়ানারদেগ ও আতেশগা—এই দুই স্থান আজারবাইজানের অগ্নিময় ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রমাণ।
এমনকি আধুনিকতার ছোঁয়ার মধ্যেও দেশটি ধরে রেখেছে তার প্রাকৃতিক বিস্ময় ও ঐতিহাসিক পরিচয়। আজারবাইজান সত্যিই এক ব্যতিক্রমী দেশ—যেখানে আগুন, ইতিহাস আর সংস্কৃতি মিলেমিশে তৈরি হয়েছে এক অনন্য অধ্যায়।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=wkF4Mlgy5bs
রাকিব