ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বামীর অত্যাচারে দৃষ্টি হারালেন স্ত্রী, কষ্টে কাটছে গৃহবধূর জীবন

বিপ্লব ঘোষ, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

প্রকাশিত: ১২:১২, ২০ মে ২০২৫

স্বামীর অত্যাচারে দৃষ্টি হারালেন স্ত্রী, কষ্টে কাটছে গৃহবধূর জীবন

তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে শ্রাবন্তি আক্তার স্বর্ণা (২৫) নামে এক গৃহবধূর দুই চোখ সুচ দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে স্বামী, সতিন, ভাসুররা। নষ্ট চোখের কষ্ট নিয়ে গরিব বাবার বাড়িতে চলছে গৃহবধূর জীবন।

গৃহবধূ শ্রাবন্তি আক্তার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের সবজি বিক্রেতা সামচুল আলমের মেয়ে ও একই গ্রামের মো. সুজন চোকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাদের ঘরে  আবরার মাহির নামের ৫ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

সুজন চোকদার ফতুল্লার একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন।

ঘটনাটি গত ৩ এপ্রিল গভীর রাত পৌনে ২টার দিকে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানার মাতুয়াইল এলাকার সাদ্দাম মার্কেটর পাশে একটি পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ঐ গৃহবধূর স্বামী সুজন চোকদার পলাতক রয়েছে।

শ্রাবন্তি আক্তার জানান, ১০ বছর আগে তার একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে সুজন চোকদারের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তারা মাতুয়াইল এলাকার সাদ্দাম মার্কেটের পাশে একটি পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়া থাকতেন। 

তিনি বলেন, গত ৩ এপ্রিল গভীর রাতের ঘটনা। আগের দিন স্বামীর কেনা জমি সতীনের নামে দিতে না করেছিলেন তিনি। এতেই ক্ষিপ্ত ছিলেন সতিন ও স্বামী। ঐদিন রাত পৌনে দুইটার দিকে সুজন চোকদার কাজ থেকে বাড়িতে ফিরেন। তাকে খুব যন্ত্র করে তাকে এক গ্লাস শরবত খাওয়ান। এতে শ্রাবন্তি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে কিছুটা অচেতন অবস্থায় দেখেন তার হাত-পা বাঁধা। দেখেন স্বামী, সতিন সানিয়া আক্তার, খালাতো ভাশুর রনি, মামাতো ভাশুর আসলাম। চিৎকার দিলে স্কচটেপ দিয়ে চোখ ও মুখ আটকে দেয়। পরে সতিন, ভাসুররা আমাকে অচেতন করে হত্যা করতে তিনটি চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে। তারা গলায় চাকু ধরে চোখ খুলে দেয়। তারা হাতুড়ি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে। তারপরও জ্ঞান না হারালে স্বামী সুজন ইনজেকশনের সুচ দিয়ে তার চোখে উপযুপরি ক্ষত করে আহত করে। পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর থেকে চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

শ্রাবন্তি আক্তারের বাবা সবজি বিক্রেতা সামচুল আলম জানান, ৪ এপ্রিল সকালে পাষণ্ড মেয়ের জামাতা সুজন ফোন করে জানায়, ‘আপনার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওকে নিয়ে যান।’ সেখানে গিয়ে মেয়ের দুর্দশা দেখতে পাই। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে নেয়া হয় একটি চক্ষু চিকিৎসালয়ে।

অসহায় বাবা সামচুল আলম জানান, তিনি ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালান। মেয়ের এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা তিনি কীভাবে করাবেন। আশপাশের লোকরা তাকে কিছু সহায়তা করেছেন। কিন্তু চোখের চিকিৎসার করানোর মতো অত টাকা তার কাছে নেই।

শ্রাবন্তি আক্তারের মা হুসনেআরা জানান, ঘটনার পর আমি বাদী হয়ে সুজন চোকদারসহ সংশ্লিষ্ট চারজনের নামে ফতুল্লা থানায় মামলা করেছি। কিন্তু আইনের ফাঁক দিয়ে মেয়ের সতিন সানিয়া আক্তার, খালাতো ভাশুর রনি, মামাতো ভাশুর আসলাম জামিনে বেরিয়ে গেছে। আমাদের মতো গরিবের সাধ্য নেই সঠিক বিচার পাওয়ার। তাইতো ওরা এতো বড় জঘন্য অপরাধ করেও জামিন পায়।

এবিষয়ে জানতে সুজন চোকদারের নবাবগঞ্জের দিঘিরপাড় গ্রামের বাড়িতে যায় প্রতিবেদক। এসময় শ্রাবন্তি আক্তারের সতিন সানিয়া আক্তারে সাথে কথা হয়। তিনি জানান, তিনি গ্রামে থাকেন। স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে মাতুয়াইলে ভাড়া বাসায় থাকেন। এঘটনার সাথে তিনি সম্পৃক্ত নন। তাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। ভাশুর রনি, আসলামও এর সাথে জড়িত নন। স্বামী সুজন চোকদার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।

ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক আমিনূর রহমান ঘটনা ও মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, এ মামলায় ৩জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা জামিনে আছেন। মামলার প্রধান আসামি সুজন চোকদার পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। 

সজিব

×