
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে অবিরাম যুদ্ধ, ধ্বংস, মৃত্যু আর অনাহারের মিছিল। গাজার পরিস্থিতি এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিদিনের জীবনই যেন বেঁচে থাকার এক দুঃস্বপ্ন। সেই গাজা নিয়েই এবার মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প— যিনি এক সময় ফিলিস্তিনি স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ দিনে ট্রাম্প বলেন, "গাজায় বহু মানুষ না খেয়ে আছে। আমরা তাদের পাশে থাকবো। গাজার সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে। অনেক বাজে কিছু ঘটছে। অনেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা তাদের যত্ন নেব।"
তাঁর এই বক্তব্যে অনেকেই বিস্মিত। কারণ এই সেই ট্রাম্প যিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিলেন।
তবে ট্রাম্পের এই সহানুভূতির বার্তা অনেকের কাছেই প্রতীয়মান হয়েছে রাজনৈতিক কৌশল কিংবা নাটকের অংশ হিসেবে। কারণ, এই সফর জুড়ে কার্যকর কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ বা শান্তির বার্তা বাস্তবে দেখা যায়নি—ছিল শুধু প্রতিশ্রুতি আর কথার ফুলঝুরি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস হঠাৎই ইসরায়েলের ভেতরে নজিরবিহীন হামলা চালায়। সেই হামলার জবাবে শুরু হয় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) গাজাকে পরিণত করেছে এক ধ্বংসস্তূপে। শহর হয়েছে ছারখার, হাসপাতাল পরিণত হয়েছে টার্গেটে। শিশুর কান্না চাপা পড়েছে ড্রোনের গর্জনে।
এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫২,৯০০ জনেরও বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজারেরও বেশি। এই সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়—প্রতিটি সংখ্যা একেকটি হারিয়ে যাওয়া জীবন, ভেঙে পড়া পরিবার, ধ্বংস হওয়া ভবিষ্যতের প্রতীক।
চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও, সেটি টিকেছিল মাত্র দুই মাস। এরপর ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার সামরিক অভিযান, যা এখনো চলমান। এই সময়ের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ২,০০০ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১৫,০০০-এরও বেশি।
গাজায় এখন শুধু বোমা নয়, নতুন শত্রু হয়েছে ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর রোগ। আইডিএফ গাজার খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় মানবিক বিপর্যয় পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। খাবার নেই, পানি নেই, ওষুধ নেই। মানুষ বেঁচে থাকলেও, তা যেন মৃত্যুর সমতুল্য। মা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না করেন, বৃদ্ধ বাবা খাবারের আশায় রাস্তায় ঘোরেন। প্রতিটি দিন যেন মৃত্যুর প্রতীক্ষা।
বিশ্ব মানবাধিকারের সুরে যতই কথা বলুক না কেন, বাস্তবে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানোয় দেখা যায়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। সভ্যতার বুলি আওড়ানো এই পৃথিবী এখন যেন নীরব, ঠান্ডা আর নিষ্ক্রিয়।
এই প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহানুভূতির বার্তা অনেকের কাছেই ঠেকেছে রাজনীতির অংশ হিসেবে। গাজার প্রতিটি ধ্বংসস্তূপ, প্রতিটি অনাহারী মুখ যেন আজ একটি প্রশ্নই ছুঁড়ে দিচ্ছে: এই কি সেই সভ্য বিশ্ব, যারা মানবাধিকারের শপথ নিয়ে নেতৃত্ব দেয়?
ট্রাম্প বলছেন, "আমরা গাজার জনগণের পাশে থাকবো।" কিন্তু গাজার বাস্তবতা বলছে, এখন সময় কেবল কথার নয়, প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপের। এখন চাই খাদ্য, পানি, চিকিৎসা আর একটি যুদ্ধহীন আকাশ।
কারণ, গাজার আকাশে আজও ড্রোনের গর্জন ভেসে আসে। শিশুর কান্না মিশে যায় ক্ষুধার্ত মায়ের আহাজারিতে। গাজার মানুষের একটিই প্রত্যাশা—একটি নিরাপদ সকাল, একটি শান্তিময় রাত।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=XRWJA2m2IxI
এম.কে.