গাজার পক্ষে কণ্ঠ তুলতেই হাতকড়া পরতে হলো কোহেনকে

গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার অপরাধে মার্কিন সিনেট থেকে থেকে হাতকড়া পরিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে আইসক্রিম কোম্পানি বেন অ্যান্ড জেরির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী বেন কোহেনকে (৭৪)।

বুধবার (স্থানীয় সময়) ওয়াশিংটনে সিনেটের একটি বাজেট বিষয়ক শুনানিতে অংশ নিতে গিয়েছিলেন কোহেন। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বক্তব্য চলাকালে কোহেনসহ কয়েকজন প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।

তাদের অভিযোগ ছিল—ইসরায়েলি আগ্রাসনে ব্যবহৃত বোমার জন্য মার্কিন কংগ্রেস নির্বিঘ্নে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে, অথচ দেশের নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

সূত্র - https://www.abc.net.au/news/

প্রতিবাদের একপর্যায়ে কোহেন চিৎকার করে বলেন,
"কংগ্রেস ওইসব বোমার অর্থায়ন করে, যেগুলো দিয়ে গাজায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। অথচ দেশে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"

তার এই প্রতিবাদের জবাবে কংগ্রেসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ক্যাপিটল পুলিশের সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে হাতকড়া পরিয়ে বের করে দেন।

সিনেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কোহেন সাংবাদিকদের বলেন,
"ক্ষুধার্ত শিশুদের কাছে খাবার পৌঁছাতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ দেওয়া জরুরি। আমরা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি, যেখানে চুপ থাকাটা অন্যায়ের সমান।"

কোহেন আরও বলেন,
"আমাদের দেশের নাম ব্যবহার করে, আমাদের অর্থ দিয়ে যেসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, তা আমেরিকার সাধারণ মানুষ কখনোই সমর্থন করে না।"

তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও বোমা সহায়তা দিয়েছে, অথচ দেশের ভেতরে স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। বিষয়টিকে তিনি "একটি জাতীয় কেলেঙ্কারি" বলেও আখ্যায়িত করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুদ্ধখাতে বাজেটের অর্ধেকও বিশ্বমানবতার কল্যাণে ব্যয় করা হতো, তাহলে বিশ্বের চিত্র ভিন্ন হতো।তিন বছর বয়সী শিশু যদি কাউকে মারতে থাকে, আপনি কি তাকে বুঝিয়ে থামাতে চেষ্টা করবেন না? যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।'

ইসরায়েলের নীতির দীর্ঘসময়ের সমালোচক কোহেন পূর্বেও একটি খোলা চিঠিতে ইসরায়েলপন্থী লবিগোষ্ঠী এআই প্যাকের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার কণ্ঠ অনেক জোরালো, কিন্তু এটা লাখো মানুষের কণ্ঠস্বর, যারা আমার মতোই ক্ষুব্ধ।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায়, যাতে ১,২১৮ জন ইসরায়েলি নিহত হন, অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর পর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।