
ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও চুক্তি না হওয়ায়, ইউক্রেন তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি রাশিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে যেসব শর্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ইউক্রেনীয় এক সূত্র "অগ্রহণযোগ্য ও ভিত্তিহীন" বলে উল্লেখ করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে রুশ আগ্রাসনের পর প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় কিয়েভ ও মস্কো। আলোচনা চলে মাত্র দুই ঘণ্টার কম সময় ধরে।
ইস্তানবুলের এক প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উভয় দেশ এক হাজার করে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে - এটি এ পর্যন্ত সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময় হতে যাচ্ছে।
রাশিয়া আলোচনার ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্প এবং ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন প্রকৃত শান্তি আনার জন্য দ্রুততম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, এবং বিশ্বকে একটি কঠোর অবস্থান নিতে হবে।” তিনি রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে “কঠোর নিষেধাজ্ঞা” আরোপের আহ্বান জানান।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি চূড়ান্ত করতে চায়, যাতে যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন বাহিনী পুনরায় সংগঠিত ও সজ্জিত হতে না পারে।
রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, “আমরা সম্মত হয়েছি যে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা দেবে এবং বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করবে। এরপর আলোচনার পরবর্তী ধাপ ঠিক করা হবে।”
তুরস্কের এক কর্মকর্তা জানান, আলোচনার পরিবেশ শান্ত ছিল। রুশ প্রতিনিধিরা স্যুট পরে এলেও ইউক্রেনের অনেকেই সেনা পোশাকে ছিলেন। তবে আলোচনার পরবর্তী সময় বা স্থান নির্ধারিত হয়নি।
ইউক্রেনীয় এক সূত্র জানিয়েছে, তারা আলোচনায় নিজস্ব ভাষায় কথা বলেছেন এবং রাশিয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আপত্তি জানানো হয়েছে।
দুইটি সূত্র জানায়, মেদিনস্কি বলেছেন রাশিয়া “যতদিন প্রয়োজন ততদিন লড়বে”, এবং ২১ বছরের সুইডেনের সঙ্গে জার পিটার দ্য গ্রেটের যুদ্ধের উদাহরণ দেন। এক সূত্র বলেছে, “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু এক বছর, দুই বছর, তিন বছর - যত দিন আপনারা চান, আমরা লড়তে প্রস্তুত।”
ইউক্রেনীয় এক প্রতিনিধি বলেন, রাশিয়ার দাবি “বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন” এবং পূর্ববর্তী আলোচনার কাঠামোর বাইরে। রাশিয়া ইউক্রেনকে নিজের ভূখণ্ডের কিছু অংশ থেকে সরে যেতে বলেছে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে, যা তিনি “অগ্রহণযোগ্য এবং অগঠনমূলক” বলে অভিহিত করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রাশিয়ার অবস্থানকে “স্পষ্টতই গ্রহণযোগ্য নয়” বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন ইউরোপীয় দেশ, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র সমন্বিতভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ তৈরি করছে।
২০২২ সালে একই ইস্তানবুলে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে রাশিয়া এখনকার আলোচনাকে দেখছে। তবে তখনকার শর্ত, যেমন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী হ্রাস এবং নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দাবি - এখন কিয়েভের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
ইউক্রেন এসব শর্তকে আত্মসমর্পণের সামিল বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দাবি করছে।
ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে রুশ বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেন, শুক্রবারের আলোচনা তিনটি দিক থেকে ইতিবাচক: সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য রূপরেখা এবং উভয় পক্ষের অবস্থান সম্পর্কে বোঝাপড়া।
প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ইস্তানবুলে জেলেনস্কির সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যান করেন, ফলে বড় ধরনের অগ্রগতির আশা কমে যায়।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে বলেন, “যতক্ষণ না তিনি ও পুতিন মুখোমুখি হচ্ছেন, ততক্ষণ কোনও অগ্রগতি হবে না।”
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা ফলপ্রসূ হওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন পুতিনের সঙ্গে “একটি চুক্তি” করতে পারবেন, তবে তা সম্ভব না হলে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, ইউক্রেন ও রাশিয়া “নীতিগতভাবে” আবারো আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী উমেরভ বলেন, পরবর্তী ধাপে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হওয়া উচিত। মেদিনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, তারা এই প্রস্তাব “নোট করে নিয়েছে”।
সূত্র: https://shorturl.at/a1mHZ
মিরাজ খান