
ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েলের পারস্পরিক সংঘাত নবম দিনে গড়িয়েছে। প্রতিদিনই উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এই সংঘাতকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘যুদ্ধ’ বলে ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
বুধবার (১৮ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানায়, ‘ফাত্তাহ-১’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ‘অপারেশন অনেস্ট প্রমিজ ৩’-এর ১১তম তরঙ্গ পরিচালনা করা হয়েছে।
আইআরজিসি দাবি করেছে, ইরানি বাহিনী ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলোর আকাশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
অভিযানের পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক বার্তা প্রকাশ করেন। এক পোস্টে তিনি ইসরায়েলকে আখ্যা দেন ‘সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা’ হিসেবে এবং লেখেন—‘যুদ্ধ শুরু হচ্ছে।’
পরবর্তী এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। আমরা দয়া করব না।’
কী এই ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র?
ফাত্তাহ একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার অর্থ এটি শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ গতিতে চলতে সক্ষম। প্রতি ঘণ্টায় এর গতি ৬,১০০ কিলোমিটারের বেশি, যা এটিকে ইসরায়েলের মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও প্রতিহত করতে হিমশিম খায়।
২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো উন্মোচন করে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন খামেনি নিজেই। এর নামের অর্থ ‘উন্মোচনকারী’। উন্মোচনের সময় তেহরানে হিব্রু ভাষায় লেখা একটি ব্যানারে উল্লেখ ছিল: ‘তেল আবিবে ৪০০ সেকেন্ড’— যা এই ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি হুমকির ইঙ্গিত দেয়।
আইআরজিসি ফাত্তাহ-১-কে ‘ইসরায়েল-স্ট্রাইকার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে দিক ও উচ্চতা পরিবর্তন করতে পারে, ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়।
কতটা কার্যকর এই মিসাইল?
ফাত্তাহ-১ একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যার পরিসীমা ১,৪০০ কিলোমিটার। এটি কঠিন জ্বালানিভিত্তিক এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে।
বিশ্লেষক ফ্যাবিয়ান হিনজ জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রে একটি ম্যানুভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিকেল রয়েছে, যা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সময় তাৎক্ষণিক গতিপথ পাল্টাতে পারে। ফলে এটি ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ এবং ‘অ্যারো’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ‘আয়রন ডোম’ হাইপারসনিক মিসাইল প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা নয়। এ কারণে ফাত্তাহ-১-কে ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন ধরনের হুমকি হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
আগে কি এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হয়েছে?
বর্তমান সংঘাতে এই প্রথমবারের মতো ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এর আগে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জেরুজালেমে চালানো এক হামলায় একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের গুঞ্জন উঠেছিল।
আইআরজিসি এক বিবৃতিতে জানায়, ইতোমধ্যে তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে একটি ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রথাগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় ফাত্তাহ-১ অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিপজ্জনক। কারণ এর গতি, নির্ভুলতা এবং প্রতিরক্ষা ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা ইরানের কৌশলগত অবস্থানকে অনেকটা এগিয়ে দেয়।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছে, যা সামনের দিনগুলোতে আরও সংঘাতপূর্ণ পরিণতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাকিব