ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

নড়াইলের নড়াগাতিতে ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, এলাকাবাসীর মানববন্ধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ২১ জুন ২০২৫

নড়াইলের নড়াগাতিতে ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, এলাকাবাসীর মানববন্ধন

নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানাধীন অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক ট্রলি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই অঞ্চলে অবৈধ ট্রলি চলাচল এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বেপরোয়া আচরণের ফলে গত এক সপ্তাহেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন নিরীহ মানুষ। প্রশাসন বলছে, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। যদিও স্থানীয় জনগণের প্রশ্ন রয়ে গেছে—যখন প্রাণ হারায় মানুষ, তখনই কেন জাগে প্রশাসন?

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুন, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া রোডে একটি অবৈধভাবে চলাচলকারী ট্রলির নিচে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক প্রবীণ দম্পতির। ওই ট্রলিটি অতিরিক্ত গতিতে ছুটে এসে সরু রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা দম্পতিকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় নড়াইলের নাগরিক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাদের মতে, প্রশাসনের অবহেলা এবং অভিভাবকহীন ট্রলি চালনা ব্যবস্থাই এই মৃত্যুদের জন্য দায়ী।

এর ঠিক চার দিন পর, ১৬ জুন, নড়াগাতি থানার পানিপাড়া রোডে আরেকটি ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এক সৌদি প্রবাসী যুবক। তিনি দেশে সাময়িক ছুটিতে এসে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। এমন একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর খবর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে যে, এই ট্রলি চালকও ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং চালনার কোনো বৈধতা ছিল না।

এই দুটি প্রাণঘাতী ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে নড়াগাতির সাধারণ জনগণ। তারা ২০ জুন শুক্রবার বিকেলে নড়াগাতি বাজারে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। বিক্ষোভ শেষে তারা নড়াগাতি থানার সামনে জড়ো হয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী এলাকাবাসীরা বলেন, “এই রকম অবৈধ যান চলাচল এবং অবিবেচক চালকদের দৌরাত্ম্য চলতে থাকলে আরও অনেক প্রাণ যাবে। প্রশাসন এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামীতে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”

নড়াইল জেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে এখন ট্রলি, লাটা ভ্যান ও নানা অবৈধ যানবাহনের চলাচল এক সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো নির্দিষ্ট কোনো লাইসেন্স ছাড়া চালানো হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রাপ্তবয়স্ক বা অদক্ষ চালকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই যানগুলোতে না থাকে ব্রেকিং সিস্টেম, না থাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সব সময়ই থেকে যায়। ট্রলির লোডিং ক্ষমতা ও চালকের নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা না থাকায় সরাসরি প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। নড়াগাতির সাম্প্রতিক ঘটনা এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে—যেখানে কিশোর বয়সী ছেলেরা কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ট্রলি চালাচ্ছে এবং আত্মরক্ষা করতে পারছে না নিরীহ পথচারীরা। প্রশ্ন উঠেছে—এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে? কিশোর চালক, না স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা? জনমত বলছে, দায় উভয় পক্ষের। একদিকে অভিভাবকদের অসচেতনতা ও উদাসীনতা, অন্যদিকে প্রশাসনের নিরবতা ও গাফিলতি এই মৃত্যুদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী এলাকাবাসীরা কয়েকটি স্পষ্ট দাবি তুলে ধরেন—অবিলম্বে ট্রলি চলাচল বন্ধ করতে হবে সরু সড়কগুলোতে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রশিক্ষণহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, লাটা ভ্যান, ট্রলি ও অন্যান্য অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে, প্রতিটি দুর্ঘটনার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

নড়াইলের নড়াগাতি অঞ্চলে ট্রলি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা শুধু একটা এলাকার নয়, পুরো জেলার জন্যই সতর্কবার্তা। অবিলম্বে যদি অবৈধ যান চলাচল রোধ না করা হয়, তবে প্রতিটি গ্রামে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আরও বাড়বে। তাই প্রশাসন, অভিভাবক, স্থানীয় সমাজ ও সচেতন নাগরিক—সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে।

এ বিষয়ে নড়াগাতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশিকুর রহমান রাজন জানান, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদিও স্থানীয় জনগণের প্রশ্ন রয়ে গেছে—যখন প্রাণ হারায় মানুষ, তখনই কেন জাগে প্রশাসন?

সানজানা

×