ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

করোনার নতুন ধরন কতটা শক্তিশালী, উপসর্গ কি কি?

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১০ জুন ২০২৫

করোনার নতুন ধরন কতটা শক্তিশালী, উপসর্গ কি কি?

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার আবারও বাড়ছে, এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সতর্কতা জারি করেছে। একই সাথে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট XFG এবং XFC শনাক্তের খবর জানিয়েছে। এই উভয়ই শক্তিশালী অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের JN.1 উপধরন।

ভারতেও নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার
বাংলাদেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি, ভারতেও NB.1.8.1 নামে একটি নতুন ধরনের বিস্তার দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে যে NB.1.8.1 বর্তমানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর সংক্রমণের হারও বেশি। তবে, WHO আশ্বস্ত করেছে যে করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় এই নতুন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি নয়। এই তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

নতুন ধরনগুলোর সংক্রমণের হার কতটা?
নতুন ধরনগুলোর দ্রুত সংক্রমণের হার দেখে গবেষকরা কোভিড আবার তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। গত কয়েক সপ্তাহে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে NB.1.8.1, Lf.7 এর পর XFG এর সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

নতুন ধরন কতটা শক্তিশালী?
 

১. সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে এই নতুন ধরনগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২. ভীতিকর নয়, তবে সতর্ক থাকতে হবে: আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা বলছেন যে নতুন এই ধরন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাইরাসের ধরন দ্রুত পরিবর্তিত হয়, তবে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) NB.1.8.1 ধরন সম্পর্কে বলেছে যে এর সংক্রমণের হার বেশি, তবে করোনার আগের ধরনগুলোর চেয়ে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি নয়।
৩. বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য ঝুঁকি: যদিও এই ধরনগুলো সামগ্রিকভাবে ভীতিকর নয়, তবে বয়স্ক এবং বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারেন।

উপসর্গ কী কী?
করোনার নতুন ধরনগুলোর উপসর্গ মূলত আগের ধরনগুলোর মতোই। তবে কিছু ক্ষেত্রে নতুন কিছু উপসর্গও দেখা যেতে পারে। সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:

  • জ্বর
  • শুকনো কাশি
  • ক্লান্তি
  • শ্বাসকষ্ট
  • গলা ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • শরীর ঠাণ্ডা (ঠান্ডা লাগা)
  • মাংসপেশীতে ব্যথা বা মাংসপেশির সংযোগে ব্যথা
  • স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া (কিছু ক্ষেত্রে)
  • ডায়রিয়া বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
  • তীব্র দুর্বলতা

কিছু নতুন বা কম সাধারণ উপসর্গ যা দ্বিতীয় তরঙ্গে দেখা গেছে বা নতুন ধরনগুলোতে দেখা যেতে পারে:

  • শ্রবণশক্তি হ্রাস (হিয়ারিং লস)
  • গোলাপী চোখ/কনজাংটিভাইটিস (তবে এটি শুধুমাত্র একটি চোখেও হতে পারে এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে)
  • তীব্র বুকে ব্যথা
  • কাশি দিয়ে রক্ত পড়া (হিমোপটিসিস)
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • পক্ষাঘাত বা তীব্র অসাড়তা
  • অত্যধিক প্রস্রাব

কতটা উদ্বেগের?
বর্তমানে, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সংক্রমণ এখনও মৃদু থাকছে এবং হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। এটি ইঙ্গিত করে যে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।

গবেষকরা বলছেন, সংক্রমণ বাড়লেই যে সবাই গুরুতর অসুস্থ হবে, তা মনে করার কারণ নেই। নতুন ধরনগুলো সহজে ছড়িয়ে পড়ছে ঠিক, তবে গুরুতর অসুস্থতা এখনও সৃষ্টি করছে না। তবে, স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি, বয়স্ক ও শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিতে থাকে বলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

টিকার কার্যকারিতা
গবেষকরা বলছেন, করোনার অমিক্রন ধরন মোকাবেলায় যে টিকাগুলো রয়েছে, সেগুলো নতুন ধরন মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা সবাইকে টিকায় সুরক্ষিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

করণীয়
বিশেষজ্ঞরা আতঙ্কিত না হয়ে কোভিড বিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলছেন জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে, গেলেও মাস্ক ব্যবহার করতে। টিকা নেয়ার পাশাপাশি স্বরভঙ্গ, শুষ্ক কাশি, হালকা জ্বর, ডায়রিয়া বা গলায় অস্বস্তি হলে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নুসরাত

×