
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)—যা পরিণত হয়েছে এক ‘নীরব মহামারীতে’। এ রোগের সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো, প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ না থাকলেও এটি ধীরে ধীরে লিভারে স্থায়ী ক্ষতি করে এবং শেষপর্যন্ত সিরোসিসে রূপ নেয়, যা হতে পারে প্রাণঘাতী।
গোপনেই বাড়ছে ক্ষতি, ধরা পড়ছে দেরিতে
লিভার বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্যাটি লিভার এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারে চর্বি জমতে জমতে একসময় প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা লিভারের কাঠামো ও কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় রোগীরা জানতেই পারেন না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত, যতক্ষণ না উপসর্গ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
সম্প্রতি এমনই এক রোগীর উদাহরণ তুলে ধরেছেন চিকিৎসকরা। ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, চোখে হলুদভাব ও পায়ে ফোলার মতো উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। পরে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটি লিভারে ভুগছিলেন, যা ক্রমে সিরোসিসে রূপ নিয়েছে।
লিভার কত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার ক্ষতির গতি ব্যক্তি ও কারণভেদে ভিন্ন হয়। হেপাটাইটিস সি বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি ১০-১৫ বছরের মধ্যেই সিরোসিসে পৌঁছাতে পারে। অপরদিকে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ (NAFLD)-এর ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ বছর সময় লাগলেও, তা নীরবেই অগ্রসর হয়। জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করেই রোগটির গতি নির্ধারিত হয়।
কেন বুঝতে পারি না ক্ষতির গভীরতা?
বিশেষজ্ঞরা জানান, লিভার অত্যন্ত সহনশীল অঙ্গ হওয়ায় এটি নিরবেই বহুদিন ক্ষতি সহ্য করতে পারে। প্রাথমিক ফাইব্রোসিস বা চর্বি জমার সময় সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। লিভার তখনও তার মূল কাজ—যেমন ডিটক্সিফিকেশন, রক্ত পরিশোধন, পুষ্টি সংরক্ষণ ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
কিন্তু একবার সিরোসিস শুরু হলে লক্ষণগুলো দ্রুত প্রকট হতে থাকে—পেট ফাঁপা, জন্ডিস, চুলকানি, পায়ে পানি আসা এবং কখনো কখনো মানসিক বিভ্রান্তিও দেখা দিতে পারে। তখন চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও জটিল হয়ে পড়ে।
প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় অস্ত্র
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফ্যাটি লিভার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও অ্যালকোহল বর্জন। প্রতি বছর লিভার ফাংশন টেস্ট ও প্রয়োজনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে রোগটি সহজেই শনাক্ত করা যায়।
মানবদেহের লিভার প্রায় ৫০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। শরীরের এই ‘প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র’টি সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিনের জীবনযাপনে সচেতনতা ও নিয়মমাফিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার বিকল্প নেই—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র ঃhttps://shorturl.at/WgN8v
পৃথী