
প্রচণ্ড গরমে চর্মরোগের মতো নানা রোগে আক্রান্ত
[প্রচণ্ড গরমে চর্মরোগের মতো নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১২০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। এর মধ্যে ৭০০-৮০০ জন চর্মরোগ নিয়ে আসেন, যাদের ৯০ শতাংশই স্ক্যাবিসসহ অন্যান্য চর্মরোগে আক্রান্ত। প্রতিদিনই হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।]
স্ক্যাবিসের ধরন কী
স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে। আঙুলের ফাঁকে, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ, হাতের তালু, কবজি, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। পরে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। রাতে চুলকানি বেশি হয়ে থাকে। ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হতে পারে। বিশেষ করে গরমকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি হলে এ রোগ বেশি হয়। নিয়ম মেনে চললে দুই সপ্তাহের চিকিৎসায় এ রোগ নিরাময়যোগ্য।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে চর্মরোগীর সংখ্যাই বেশি। কেউ এসেছেন পুরো শরীরে ঘামাচির মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি সঙ্গে তীব্র চুলকানি নিয়ে। আবার কেউ এসেছেন খোসপাঁচড়া, নোখের কনুই রোগ নিয়ে। তবে এদের মধ্যে স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি।
হাসপাতালে আসা স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে আসা মিসেস নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ধরে সারা শরীরে চুলকানিতে ভুগতেছি। ফার্মেসি থেকে অনেক ওষুধ খেয়েছি, বিভিন্ন মলম লাগিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই হাসপাতালে এসে চর্মরোগ বিভাগের ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বলেছেন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়েছি। ওষুধ ও মলম দিয়েছেন আর নিয়ম মেনে চলার জন্য বলেছেন।’ অপর রোগী গাজীপুর থেকে সীমা আক্তার চর্মরোগে আক্রান্ত ১৮ মাসের সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে এসে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমার বাচ্চার শরীর চুলকাচ্ছে।
চুলকানি আস্তে আস্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়েছে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
‘শিশুদের চর্মরোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্ক্যাবিস। এটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের হলে অন্য সদস্যদেরও হতে পারে। এ জন্য আক্রান্ত রোগীসহ পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। যেহেতু গরমকালে এ রোগটি বেশি দেখা দেয় সেহেতু বাচ্চাদের কুসম গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে, অ্যালার্জি জাতীয় খাবারগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, লিকুইড জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হবে।
ভ্যাপসা গরমে তাপমাএা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদিনই হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ছোট-বড় সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে এ রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক সাথে অনেক ছাত্র থাকে, তাদেরকে এক সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড় পরিবারের অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের কাপড় কড়া রোদে শুকাতে হবে বা আয়রণ করে নিতে হবে এবং যথাযথ নিয়ম মনে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে জরুরিভাবে।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বার : লেজার অ্যান্ড এস্হেটিক স্পেস, ১২৯, গ্রীন ল্যান্ড মার্ক টাওয়ার, লিফটের -৩ কলাবাগান, ধানমন্ডি, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৩০১০৯৩৯৩৮