
নারীদের মধ্যে যত ক্যান্সার হয় তার এক-চতুর্থাংশই জরায়ু মুখের ক্যান্সার। এই ক্যান্সারের প্রবণতা উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশে বেশি। এর মূল কারণগুলো হচ্ছে- সচেতনতার অভাব, লজ্জা, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা, নিজের গোপন অঙ্গের পরিচ্ছন্নতার অভাব, অল্প বয়সে বিয়ে এবং সন্তান প্রসব, অধিক সংখ্যক যৌনসঙ্গী, যা এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণের মধ্যে একটি কারণ প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সেটা হচ্ছে, এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণ। আর এ সংক্রমণ হয়ে থাকে অধিকসংখ্যক পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার কারণে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার আক্রান্ত ১০০ রোগী পরীক্ষা করে ৯৯ জনের জরায়ু মুখে এইচপিভি ভাইরাসের জেনম পাওয়া গেছে। অন্যসব ক্যান্সারের মতোই জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মৃত্যুঝুঁকি খুব বেশি। তবে সূচনায় নির্ণয় করা গেলে এই ক্যান্সারও নিরাময় করা সম্ভব। বর্তমানে এই ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য সারাবিশ্বে প্যাপানিকুলা (পিএপিএস) টেস্ট নামে একটি সহজ পরীক্ষা চালু আছে। এই পরীক্ষা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে করা হচ্ছে।
এছাড়া ভায়া (ভিআইএ) টেস্টের মাধ্যমেও প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এই রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে- অনবরত সাদাস্রাব ভাঙা, কখনও বা একটু রক্ত মিশ্রিত অথবা যৌন মিলনে সামান্য রক্তপাত হওয়া। এই লক্ষণগুলোর কোন একটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, ক্যান্সার হয়েছে কি-না। প্রাথমিক পর্যায় ১ ও ২ নম্বরে সার্জারি ও রেডিওথেরাপি, দ্বিতীয় পর্যায় ২ বি এবং ৩ নম্বরে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি এবং চতুর্থ পর্যায়ে কষ্ট লাঘব ও ব্যথা উপশম এবং জটিলতার চিকিৎসা দেয়া হয়। সম্প্রতি এইচপিভি ভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বেরিয়েছে। বাংলাদেশেও এ টিকা পাওয়া যাচ্ছে। কিশোরী বয়সে বিশেষ করে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সে এই টিকার ৩টি ডোজ নিলে তা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এই ক্যান্সার সম্পূর্ণ ভাল হওয়া সম্ভব। তাই শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তবে সব কিছুরই আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়া ভাল। তবে সচেতনা থেকে মনোবল শক্ত রাখা উচিত। মনে রাখবেন শুরুতেই ধরলে পড়া; যে কোন রোগই যায় যে সাড়া।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ইয়াকুব আলী,
(টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ)
রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ,
এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল,
ফার্মগেট ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল,
মোবাইল : ০১৯১৫-৭২৮-২৬৬