ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

যেকারণে আল জাজিরাকে নিয়ে পশ্চিমারা এত আতঙ্কিত!

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২০ জুন ২০২৫

যেকারণে আল জাজিরাকে নিয়ে পশ্চিমারা এত আতঙ্কিত!

ছবি: সংগৃহীত

কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ঘিরে পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলের ক্ষোভ ও আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন, ফিলিস্তিন সংকট এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে আল জাজিরার বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টিং অনেক আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী শক্তির অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। আল জাজিরা মূলত পশ্চিমাদের দ্বিচারিতার মুখোশ উন্মোচন করেছে, আর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে পশ্চিমা রাজনীতির কাছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হলেও অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ছিল নিস্পৃহ। কিন্তু তখন আল জাজিরা সরাসরি সম্প্রচারে তুলে ধরেছে গাজার বাস্তবতা—শিশুদের কান্না, ধ্বংসস্তূপে জীবিতদের খোঁজ, হাসপাতালের বিভীষিকা।

শুধু ইসরায়েল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবিকতার নামে সাম্রাজ্যবাদী অভিযান’—চলেছে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে। এইসব ঘটনাকে আল জাজিরা সরাসরি তুলে ধরে। এর মাধ্যমে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি, মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার নামে হস্তক্ষেপের প্রকৃত রূপ উদঘাটিত হয়েছে। যেখানে অন্যরা নীরব থেকেছে।

আল জাজিরার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ ও চাপ প্রমাণ করে—সাংবাদিকতা যখন সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়, তখন তা রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত হয়। পশ্চিমা মিডিয়া যখন 'নীতিকথা' শোনায়, তখন আল জাজিরা তুলে ধরে ভবনের নিচে চাপা পড়া এক শিশু বা বিধ্বস্ত হাসপাতালের প্রতিবেদন।

সাংবাদিকতার এই সত্যভিত্তিক অবস্থানের কারণে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের পক্ষ থেকে বারবার আল জাজিরার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসে ইসরায়েল সরকার আল জাজিরা আরবি ও আল জাজিরা মুবারাশ-এর সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন ও প্রযোজকদের ওপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যদিও এরপরও সীমিত পরিসরে আল জাজিরা এখনও ইসরায়েলে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “আল জাজিরাকে যদি ইসরায়েলে সংবাদ প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হবে।” তিনি আরও বলেন,“যদি কেউ ইসরায়েলে বসে আল জাজিরা দেখে, তাহলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং সংবাদমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা বেন-গভিরের বক্তব্যকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি চাপ হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আল জাজিরাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু সংবাদ প্রবাহ নয়, আন্তর্জাতিক বার্তাবহ প্রভাবও নিজেদের অনুকূলে রাখতে চাইছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন ও নীতিমালাকে ঘিরে যেভাবে আতঙ্ক এবং প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা প্রমাণ করে সাংবাদিকতা যখন সত্য প্রকাশ করে, তখন সেটিই রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

 

ফারুক

×