
ছবিঃ সংগৃহীত
চরফ্যাসনের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় এখন নিত্যদিনের চিত্র। কোনো উপলক্ষ্য কিংবা কোনো দিনক্ষণ বিবেচ্য নয়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শত শত পর্যটকের আগমনে জমজমাট থাকে উপজেলার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। দেশের বৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলার বৃহৎ উপজেলা চরফ্যাসন ২১টি ইউনিয়ন ও ৪টি থানা নিয়ে গঠিত।
বিশাল আয়তনের এই উপজেলায় প্রায় ছয় লক্ষ মানুষের বসবাস। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা এই জনপদে রয়েছে ত্রিশটির বেশি প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চরফ্যাসনের পৌর শহরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার "চরফ্যাসন টাওয়ার (পূর্বনাম জ্যাকব টাওয়ার)", দেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদ, ফ্যাশন স্কয়ারসহ শিশু ও বিনোদন পার্ক পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
পাশাপাশি অবস্থিত এই তিনটি স্থাপনার অসাধারণ নির্মাণ শৈলী প্রতিনিয়ত ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এদের স্বতন্ত্র পরিচয় তুলে ধরছে।
চরফ্যাসন টাওয়ার (পূর্বনাম জ্যাকব টাওয়ার) পর্যটকদের জন্য নির্মিত একটি ওয়াচ টাওয়ার। আইফেল টাওয়ারের আদলে তৈরি ১৬ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারের চূড়া থেকে চারপাশের ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দেশের সর্বোচ্চ এই টাওয়ারটি উপমহাদেশের অন্যতম উঁচু ওয়াচ টাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম। পর্যটন এলাকা চরফ্যাসনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দ থাকে, এই সুউচ্চ টাওয়ারের চূড়ায় উঠে সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও এক নজরে পুরো শহর দেখা।
বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব মসজিদ চরফ্যাসন কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদ। সৌন্দর্যমণ্ডিত এই মসজিদটি শহরের প্রাণকেন্দ্র চরফ্যাসন টাওয়ার ঘেঁষা পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
সিরামিক ইটের নিপুণ গাঁথুনিতে তৈরি দেয়ালজুড়ে রয়েছে ছোট ছোট ফাঁকা স্থান, যার মধ্য দিয়ে নির্মল বাতাস ভিতরে প্রবেশ করে পুরো মসজিদকে শীতল করে রাখে। উপরে রয়েছে মাকড়সা আকৃতির কাঁচের গম্বুজ, যা ভেদ করে সূর্যের আলোকরশ্মি মসজিদজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ এক তলাসহ চারতলা বিশিষ্ট খাসমহল মসজিদে একসাথে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভিতর-বাহিরে নান্দনিক লাইটিং, আর পাথর খচিত প্রাঙ্গণসহ প্রকৃতিবান্ধব নির্মাণ শৈলীর ডিজাইনের এই মসজিদ ইসলামপ্রিয় মানুষ ছাড়াও সকল পর্যটকদের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের একই কেন্দ্রে আবদ্ধ করেছে। চরফ্যাসন টাওয়ারের উত্তর পাশে রয়েছে ফ্যাশন স্কয়ারসহ শিশু-কিশোরদের মনন বিকাশে ও সুস্থধারার বিনোদনের জন্য বিশাল আয়তনের শিশু ও বিনোদন পার্ক। এ পার্কে রয়েছে ছোট ট্রেন জার্নির ব্যবস্থা, নাগরদোলা, যান্ত্রিক ঘোড়া রাইডিং, কৃত্রিম ক্যানেলে ওয়াটার ট্রিপসহ বেশ চমকপ্রদ রাইডিং। রয়েছে নাইন-ডি মুভি শোয়ের ব্যবস্থা।
সর্বমহলে বলা হয়ে থাকে, পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই তিন পর্যটন স্থাপনা চরফ্যাসনের আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছে।
বাউফল উপজেলা থেকে চরফ্যাসন শহরের পর্যটন স্পট ও স্থাপনা ঘুরতে আসা পর্যটক রায়হান মাহমুদ বলেন, পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশজুড়ে চরফ্যাসনের খ্যাতি রয়েছে। বিশেষ করে মিনি সুন্দরবন খ্যাত কুকরী-মুকরীর বিশাল ম্যানগ্রোভ, মিনি কক্সবাজার খ্যাত খেজুর গাছিয়া সমুদ্র সৈকত, বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক, জ্যাকব টাওয়ার, পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিনন্দন খাসমহল মসজিদের কথা শুনেছি। এই স্পট ও স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদুল আযহা শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর চরফ্যাসনে এসেছি। আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছি। চরফ্যাসনের বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্রগুলো ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছি। একটি উপজেলায় এত পর্যটন স্পট ও স্থাপনা—এ যেন শেষ হবার নয়!
উপকূলীয় মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা রাইটস ফর কোস্টাল পিপলের মহাসচিব ইব্রাহিম খলিল সবুজ বলেন, উপকূলীয় এলাকা চরফ্যাসনে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পথ সুগম করেছে। এখন দরকার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখানে বিনিয়োগ সৃষ্টি করা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চরফ্যাসন পৌরসভার প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি বলেন, চরফ্যাসনের পর্যটন স্থানগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে প্রশাসন। সরকারি উদ্যোগে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
ইমরান