
ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর মহাসাগর আমাদের কাছে বিশাল একই জলের বিস্তার মনে হলেও, একেকটি সামুদ্রিক প্রাণীর কাছে এর প্রতিটি অংশই ভিন্ন অর্থ বহন করে। সেই ভাবনা থেকেই অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একত্রে তৈরি করেছেন একটি ইন্টার্যাকটিভ মানচিত্র, যা সামুদ্রিক জীবদের আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রমকারী অভিবাসনপথগুলোকে দৃশ্যমান করে তোলে।
এই মানচিত্রের নাম মিগ্র্যাটরি কানেক্টিভিটি ইন দ্যা ওশান (মিকা)। এটি ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে পাখি, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী, মাছ ও কচ্ছপসহ ১০৯টি প্রজাতির গতি ও অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
সামুদ্রিক অনেক প্রাণী নির্দিষ্ট কিছু পথ ধরে প্রতি বছর অভিবাসন করে। এই পথগুলোতে সঠিক সময়ে থাকে উপযুক্ত জলীয় পরিবেশ ও খাদ্য, যা তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে মানবজাতির নির্ধারিত সীমারেখা, যেমন মাছ ধরার এলাকা, জাহাজ চলাচলের রুট ও জাতীয় জলসীমা-এই পথগুলোকে বাঁধাগ্রস্ত করে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবগন বিজ্ঞানী লিলি বেন্টলি বলেন, “এই টুল প্রায় ২,০০০টি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলকে যুক্ত করেছে এবং সীমান্তজুড়ে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।”
মিকা দেখায়, কোনো একটি দেশ কেবলমাত্র নিজেদের জলসীমায় সামুদ্রিক অভিবাসী প্রাণীদের সুরক্ষা দিতে পারলেও, পুরো অভিবাসন পথ জুড়ে তা সম্ভব হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, সবুজ কচ্ছপ যারা কোস্টারিকায় বাসা বাঁধে, তারা নিকারাগুয়া হয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলে যায়। কোস্টারিকায় কচ্ছপগুলো সংরক্ষিত হলেও, নিকারাগুয়ার উপকূলে তাদের ধরা বৈধ–ফলে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক কচ্ছপ নিধন হয়।
জাতিসংঘের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন অভিবাসী প্রজাতিগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। যেমন, তাপমাত্রার পরিবর্তনে খাদ্যের প্রাপ্যতা, পরিসর ও প্রজননক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। অনেক প্রজাতি এখন মেরু অঞ্চলের দিকে সরে যাচ্ছে, যা সমুদ্র স্রোত ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করছে।
মিকা মানচিত্র তাৎক্ষণিক অভিবাসনের ছবি দিলেও ভবিষ্যতে সময়ভিত্তিক পরিবর্তন সংযুক্ত করে মহাসাগরের সংযুক্ততা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
মিকা একাধিক গবেষণার ঘাটতিও চিহ্নিত করেছে। দুই-তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক অভিবাসী প্রজাতির তথ্য এখনও অপর্যাপ্ত। আবার, গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের দিক থেকেও ভূগোল ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে বড় ধরনের পক্ষপাত রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সীবার্ড বা সামুদ্রিক পাখিদের তথ্য মূলত মেরু অঞ্চলে বেশি, অথচ প্রজাতির বৈচিত্র্য ও মানবীয় হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি ঘটে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে।
মিকা মানচিত্র এখন বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের কাছে সামুদ্রিক অভিবাসনকে আরও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করছে - যার ফলে ভবিষ্যতের সুরক্ষা পরিকল্পনা হতে পারে আরও কার্যকর ও সহযোগিতাপূর্ণ।
সূত্র: https://shorturl.at/XYC8T
মিরাজ খান