ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

অকৃত্রিম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন

গৌতম পাণ্ডে

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

অকৃত্রিম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন

জর্জ হ্যারিস

‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গানটি শতবার শোনার পরও এখনো আমাদের হৃদয়ে জেগে ওঠে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সব স্মৃতি। বারবার অশ্রুসজল হয়ে যাই আমরা। এ জন্যই জর্জ হ্যারিসন এত বেশি প্রিয় আমাদের কাছে। উনিশ একাত্তরের উত্তাল সময়। জন্মভূমিকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে চলছে মুক্তিযুদ্ধ। জীবন বাঁচাতে এরই মধ্যে লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছে ভারতে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে খাবারের সংকট। কলেরাসহ নানা রোগে জর্জরিত হাজার হাজার মানুষ। ভয়াবহ সেই পরিস্থিই ব্যথিত করে সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শঙ্করকে। তার চিন্তার ফসল ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

এই উদ্যোগে পাশে পেয়ে গেলেন বিটলস গায়কদের অন্যতম জর্জ হ্যারিসনকে। এ দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর গণহত্যা গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল তার অন্তরকে। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১ আগস্টের এ কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া শেষ গান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ এখনো বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে আছে অপার মহিমায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন ও শরণার্থীদের সাহায্যার্থে এত বড় অনুষ্ঠান বিশ্বে এই প্রথম। এতে জর্জ হ্যারিসন তৃপ্ত হয়েছিলেন। রবিশঙ্কর আনন্দিত হয়েছিলেন।  ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর বড় আকর্ষণ ছিলেন বব ডিলান ও জর্জ হ্যারিসন। জর্জ হ্যারিসন আটটি গান গেয়েছিলেন।

এর একটি ছিল বব ডিলানের সঙ্গে। বব ডিলান গেয়েছিলেন পাঁচটি গান। রিঙ্গো স্টার ও বিলি প্রেস্টন একটি করে গান করেছিলেন। লিওন রাসেল একটি একক এবং ডন প্রেস্টনের সঙ্গে একটি গান করেছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা ছিল জর্জ হ্যারিসনের সেই অবিস্মরণীয় গান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। গানটি লিখেছেন জর্জ হ্যারিসন এবং সুরও তার।

গানের মূল কথাই ছিল বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান। গানের কথায় এমন আবেদন ছিল যে ‘সকলের কাছে মিনতি জানাই আজ আমি তাই/ কয়েকটি প্রাণ এসো না বাঁচাই’ বা ‘এত যে বেদনা রাখি দূরে/ দেবে না তোমার ক্ষুধিতকে রুটি সামান্য দুটি/ মানুষগুলোকে সহায়তা দাও।’ জর্জ হ্যারিসন পুরো গানটা গেয়েছেন উচ্চৈঃস্বরে করুণ বিলাপের সুরে গভীর মানবিক আবেদন নিয়ে। সে জন্য গানের সেই সুর আজও আমাদের উজ্জীবিত করে।
এসব কারণেই রবিশঙ্কর, জর্জ হ্যারিসন এবং ওই কনসার্টের শিল্পীদের প্রতি আমাদের আগ্রহ ও আকর্ষণ ম্লান হয় না কিছুতেই, কোনো সময়েই নয়। বরং তা প্রেরণার অফুরান উৎস হয়ে আছে। আমরা যতবার দেখি আর শুনি, সেই প্রথম দেখার মতো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি বারবার।
জর্জ হ্যারিসনের স্ত্রী অলিভিয়া হ্যারিসন। তিনি জর্জ হ্যারিসন ফান্ড ফর ইউনিসেফের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখতেই তিনি ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এসেছিলেন ঢাকায়। এটাই ছিল তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। তিনি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দরিদ্র শিশু ও কিশোরদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ দেখেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিশুদের জন্য কিছু কর্মসূচি চলে জর্জ হ্যারিসন ফান্ডের সহায়তায়। বছরের পর বছর ধরে তার প্রয়াত স্বামীর শুরু করা মানবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন, যে কাজের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের শিশুরাও। এভাবেই পণ্ডিত রবিশঙ্কর, জর্জ হ্যারিসন এবং ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আজও সক্রিয় বাংলাদেশে।

×