
.
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস আজ শনিবার। দিবসটি উদ্যাপন করা হয় প্যারিসের ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জর্জ নভেরের জন্মদিনে। দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে কথা হয় দেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী, নৃত্যনন্দনের পরিচালক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীব্যাপী উদ্যাপন করা হয় আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। নৃত্যশিল্পীদের জন্য ভালো যোগসূত্র স্থাপনের দিন আজ। বিশ্বের প্রতিটি নৃত্যশিল্পীদের জন্য এ দিবসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিবসটির মধ্যদিয়ে আমার মনে হয়, সব নৃত্যশিল্পীরাই একইসূত্রে গাঁথা। আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস তাই সব নৃত্যশিল্পীদের এক যোগসূত্র। যার জন্মদিনকে ঘিরে এই দিবস, আমরা সেই মহান শিল্পী জ্যঁ জর্জ নভেরের ভাবনাটাকে পাচ্ছি।
শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় বলেন, শরীর, ছন্দ, আত্মা, মন, সংগীত এসব নিয়ে নান্দনিক ছন্দিত শরীরী প্রতিমাই হলো নৃত্য। পণ্ডিত বিরজু মহারাজ বলেছেন, নৃত্য হলো প্রকৃতি। হৃৎপিণ্ডের ধুকধুক শুনলেই বোঝা যায়, সে তার নিজস্ব ছন্দে নাচছে। শাস্ত্রীয় নৃত্য ও সংগীত মিলে মন ও আত্মার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে। নৃত্য খুব সহজেই সবার কাছে পৌঁছায় ও গ্রহণযোগ্যতা পায়। নৃত্যের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, মানুষে মানুষে বিনিময় ঘটে, কথা হয়। নৃত্য এমনই একটা মাধ্যম, যা আমাদের আশা-আকাক্সক্ষাকে একটা আকৃতি দেয়, যা প্রত্যেকের অভিব্যক্তির জন্যও প্রয়োজনীয়। দুঃসময়ে-দুর্দিনে নৃত্য ও অন্যান্য উপস্থাপন-কলা মানুষের মধ্যে আনন্দ বিতরণ করে, যা আমাদের সত্তার ও সময়ের পরিচয় ঘটায়।
এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের ‘বাণী’ রচনা করেছেন চীনের নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার ইয়াং লিপিং।
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ২০২৩-তে তার বাণীটির মর্মার্থ এমনই, আমার নিজস্ব জগতে নৃত্য সেই শৈশবকাল থেকেই আমাদের জীবন ও অস্তিত্বে জটিলভাবে মিলেমিশে আছে। এটা মানব জীবনের সঙ্গে প্রকৃতি ও সকল জীবিত প্রাণীর মধ্যে যোগাযোগের এক চাবিকাঠি। আমার নিজের শহরের একটা কথা খুব চালু আছে ‘তোমার পা আছে অথচ নাচতে পার না, তো তোমার সারাজীবনটাই বৃথা হয়ে গেল’। প্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে নৃত্যের রয়েছে এক নিবিড় সম্বন্ধ। আমি যতটুকু জেনেছি নৃত্যই হলো একমাত্র প্রকৃতি ও জীবনের কথা-এটাই নৃত্যের সারকথা।
শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে বয়স বাড়লে শিল্পী জীবনও শেষ হয়ে গেল। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সময়, চর্চা, অভিজ্ঞতা, বোধ-উপলব্ধি যত ঋদ্ধ হবে, নৃত্যের অভিব্যক্তিও তত সুন্দর হবে। আমাদের দেশের দর্শক, ভোক্তা, সরকার, রাজনীতিবিদ সবাইকেই এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই নৃত্যশিল্পের উন্নতি ঘটবে এবং নৃত্যশিল্পীও সম্মান ও মর্যাদা ফিরে পাবে। আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কমিটি ১৯৮২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালন শুরু করে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালন করে থাকে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও অন্যান্য নৃত্য সংগঠন। এই দিবসটি পালন করা হয় ২৯ এপ্রিল ক্ষণজন্মা নৃত্যশিল্পী জ্যঁ-জর্জ-নভেরার (১৭২৭-১৮১০) জন্মদিনকে মনে রেখে। সারা পৃথিবীতে নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালিত হয়। নৃত্য মানুষের সম্মিলন ঘটায় তার পরিচিত ভাষা দিয়ে। নৃত্যের আনন্দ বিনিময় ঘটে দর্শকের মধ্যে, তার বোধ-উপলব্ধিকে সচেতন করার জন্য। আজকের এই দিনে যারা নৃত্যের সৌন্দর্য ও এর অন্তর্নিহিত শক্তিকে বুঝতে পেরেছেন, ভালোবেসেছেন, তাদের সবার জন্য আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের শুভেচ্ছা রইল।