
দীর্ঘ ২৩ বছরের প্রতীক্ষার পর অবশেষে বগুড়াবাসীর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। সরকার মঙ্গলবার বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আইন পাস হলেও এতদিন সেটি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।
এই স্থবিরতা ভাঙার পেছনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হোসনা আফরোজা। ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় যোগদানের পর তিনি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। বিষয়টি জানার পর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসনের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক বার্তায় হোসনা আফরোজা লেখেন, “বগুড়ার মানুষ শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা এবং বিজ্ঞানমুখী। এই জেলার উন্নয়নের জন্য একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সময়ের দাবি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি আমার অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রেখেছি।”
২০০১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস করা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উপাচার্য নিয়োগ, স্থায়ী ক্যাম্পাস, নিয়োগ কিংবা অবকাঠামো কোন কিছুই করেনি।
সারা দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। উত্তরাঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ৩টি (রাজশাহী, দিনাজপুর, পবিপ্রবি)। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, বগুড়া একটি বড় ও শিক্ষাবান্ধব জেলা হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা অবকাঠামোতে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ৬-৭ বার লিখিতভাবে উপাচার্য নিয়োগের অনুরোধপত্র প্রেরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সরাসরি প্রস্তাব উপস্থাপন
সচিবালয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ের ফলোআপ ও যোগাযোগ।
জনমত গঠনে সাংবাদিক ও সুধীসমাজকে সম্পৃক্ত করার কথা জানিয়েছেন। বগুড়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড. হাসানাত আলী বলেন, এই অর্জন শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি একটি সামাজিক বিজয়, একটি জেলার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: শওকত আলম মীর বলেন, “বগুড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকা লজ্জাজনক। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিরলস প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্ধারণ ও বাজেট বরাদ্দ প্রক্রিয়া দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি কার্যক্রম শুরু এবং ভবিষ্যৎ ক্যাম্পাস স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
বগুড়ার শিক্ষানুরাগী মানুষ আজ গর্বিত। তাঁদের বহুদিনের প্রত্যাশিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় অবশেষে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। আর এর পেছনে অন্যতম চালিকা শক্তি ছিলেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা একজন সৎ, দূরদর্শী এবং নিবেদিতপ্রাণ প্রশাসক। তাঁর নেতৃত্বে প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম, এবং সাধারণ মানুষ সবাই একত্রিত হয়ে বদলে দিলেন একটি ইতিহাস।
মুমু