
"হাসনাতদের আন্দোলনে ঠান্ডা পানি স্প্রে আর জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের দিকে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট"। তিন দফা দাবির প্রেক্ষিতে আজ যমুনার অভিমুখে জবি শিক্ষার্থীদের লংমার্চ কর্মসূচিতে কাকরাইলে পুলিশি আক্রমণের ঘটনায় এমন মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মৎস ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড় আসলেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এই লং মার্চে পুলিশ হামলা চালায়। এই ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক সহ শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা যায়। হামলার পরপরই শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।তারা বলেন, আমরা তো শান্তশিষ্ট আন্দোলনই করছিলাম অথচ আমাদের উপর বিনা অপরাধে পুলিশ হামলা চালালো। আমাদের শিক্ষকরাও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। আমাদের দাবি মেনে তো নেওয়ায় লাগবে সাথে হামলাকারীদের বিচার করতে হবে। নাইতো আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।
দর্শন বিভাগের ২০২১ -২০২২ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী শহীদুল সুমন বলেন আমাদের আর কোনো ভাষা নেই। এভাবে আমাদের উপর হামলা করবে কখনোই ভাবিনি। আমার ভাইয়েরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে, বিচার চাই এ হামলার।গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২ - ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী মুসাব্বির বলেন এমন নির্দয় আচরণ কিভাবে করে মানুষ। বৈষম্য এখনো সবজায়গায়। একজনদের বেলায় ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা,আর একজনের বেলার গরম পানি। এখনো দুই নীতি বিদ্যমান বাংলাদেশে। বৈষম্যের কোনো ঠাঁই এ বাংলায় হবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১ টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবন যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেইট বাঁধার সম্মুখীন হয়। পরে মৎস ভবনে ফের পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোডে আসতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। পুলিশি হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুরতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোয়া ৩ টার দিকে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে যান।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক সহ শতাধিক আহত হয়েছেন । এর প্রতিবাদে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোডের সামনে বৃষ্টিতে ভিজেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এদিকে বিকাল ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আরও কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় শিক্ষার্থী মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। যমুনার অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর যে হামলা চালানো হয়েছে তার বিচার করতে হবে। ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।
আহত শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব। রমনা জোনের ডিসি মাসুদ বলেন, যমুনার সামনে জাওয়ার কোনো সুজোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের উপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক রেজাউল করিম বিকাল ৪ টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে প্রবেশ করেছেন। তিনি এর আগে বলেন জবি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির আন্দোলনে সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনে ছিল।পুলিশের এ অমানবিক হামলার করার কোনো দরকার ই ছিল না।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো-
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাজু