আজ একটু আগেই ক্যাম্পাসে এসেছে তৌহিদ হাসান পাভেল আর আরিফুল ইসলাম নাইম। ক্যাম্পাস এখনও জমেনি। তারা চুপচাপ মাঠে বসে আছে। পাভেল হঠাৎ সাদ্দামকে লক্ষ্য করে ডাকল। মূল ফটক দিয়ে সকাল সকাল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছিল সে। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে গেল সাদ্দাম। ‘ভাল লাগছিল না তাই আগেই চলে আসলাম‘ কেমন যেন একটা ভাঙ্গা গলায় কথাটা বলতে বলতে মাঠে বসে পরল সাদ্দাম। সবাই আবার নীরব। বেশ কিছু সময় পর পাভেল মৃদু স্বরে বলে উঠল, ‘শেষ ক্লাসের কষ্ট আর প্রথম ক্লাসের আনন্দের ভেতর একটা অন্যরকম মিল আছে তাই না ?’
সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২৩তম ব্যচের শিক্ষার্থী এরা। এদের আনমনের কারণ আজ তাদের ক্যাম্পাস জীবনের শেষ ক্লাস। শেষ ক্লাসের পর শিক্ষা সমাপনী উৎসবে মেতে উঠবে এরা সবাই। ‘বিদায় হাওয়ার বেদিতে আবির ধূলি, মোরা ২৩-এর স্বপ্নকুড়ি এই সেøাগানে ফার্মেসি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী উৎসবের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে তাদের দীর্ঘ চার বছরের শিক্ষা জীবনের। উৎসবের দিন সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের চারপাশে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা সমাপনী উৎসবের শুরু“হয় আবির ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে। আবিরের রঙে রঙিন হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস জীবনের শেষ স্মৃতিটুকু ফ্রেমে বন্দী করার জন্য সবাই মেতে উঠে সেলফি উৎসবে। বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদেরও আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেয় তারা। তারপর কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সবাই সবার সাদা রঙের টিশার্টে নিজের মতো করে লিখে দেয় মনের কথা, তুলে ধরে বন্ধুত্বের দাবি।
আবেগে আপ্লুত বিদায়ী শিক্ষার্থী সাজ্জাদ সবুজ অতীতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘৪ নবেম্বর ২০১২ ছিল আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিন। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় খুনসুটি, আড্ডা, হৈচৈ। চোখের সামনে আজও ভেসে ওঠে সেই রঙিন দিনগুলো। দেখতে দেখতে চার বছর যে কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে ইসরাক ইলা জানান, ‘হয়তো তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে কিন্তু একসঙ্গে সেই আড্ডা, সেই গান, একটু দুষ্টামি কিংবা অতি সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া আর হবে না। সবাইকে খুব মিস করব। ক্যাম্পাস জীবনের পরেও বন্ধুত্ব হয় কিন্তু সহপাঠীদের সঙ্গে এই বন্ধুত্বের আবেদনটা চিরকালই একটু অন্য রকম রয়ে যায় মনের মাঝে।’
শিক্ষা জীবন শেষে কর্মব্যস্ত বাস্তবতায় প্রবেশ করলেও চার বছরের বন্ধুত্ব, প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুখগুলো অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভালবাসার গল্পে সারা জীবনের সাথী হয়ে থাকবে। মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তবতা।
তাজবিদুল ইসলাম
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: