
ছবি: সংগৃহীত
সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ঠিক করা হয়— ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’।
গত এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কমিটির কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও যথাসময়ে রূপরেখা প্রকাশ করেনি ইউজিসি। পরবর্তীতে চলতি মে মাসের ৮–১০ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেনি মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী ২–৩ দিনের মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়োগসহ অধ্যাদেশ জারি না করা হয়, তাহলে তারা ফের আন্দোলনে নামবেন।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এসব ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না। তবে চলতি সপ্তাহে মিটিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউজিসি নিজে থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে না, তবে এ সপ্তাহের মধ্যেই অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের বিষয়ে জোর চেষ্টা করছে তারা।
এদিকে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের শুধু আশ্বাস দিয়ে কাজ না করার অভিযোগ তুলে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী যাকারিয়া বারী সাগর বলেন, “সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের পর, বর্তমান শিক্ষার্থীদের পুরোনো সংকটের সমাধান দিতে এবং সেশনজট নিরসন করতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই দেখভাল করছে ইউজিসি। তাদের সকল কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল। সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি চার মাসের মধ্যেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, লোগো, রূপরেখা তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইউজিসির পরামর্শ অনুযায়ী ঢাবি সিন্ডিকেট সভায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন পাস হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যায়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোনও এক অদৃশ্য ছায়ায় আটকে আছে সেই ফাইল।”
দাবি আদায়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে যোগাযোগ করেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় আমরা পড়ার টেবিল ছেড়ে পুনরায় রাজপথে এসেই অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ আদায় করব।”
এ নিয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের আরেক মুখপাত্র ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, “আজ সকালেই মাননীয় পরিকল্পনা উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সমাধান করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আশা করি, অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সমস্যা ২/১ দিনের মধ্যে সমাধান হলে অধ্যাদেশ দ্রুতই আদায় করে নিতে পারব। এতোদিন ধাপে ধাপে কাজগুলো গুছিয়ে আনার জন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেইনি। কিন্তু আমাদের নিয়ে খেলাধুলার সুযোগ কাউকে দেব না। আমরা সম্মান করতে জানি, আর সম্মানের মূল্য ঠিক সেভাবেই চাই। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী প্রশাসন অনুমোদন না করে, তাহলে আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।”
অন্যদিকে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা অবস্থায় সাত কলেজের ভর্তির আবেদন শুরু হয়। পরবর্তীতে জানুয়ারির শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে অধিভুক্তি বাতিল ও ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর আগেই সাত কলেজে ভর্তির জন্য ৩৩ হাজার ১০১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। মূলত এ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাত কলেজকে নিয়ে নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির মৌলিক কার্যক্রম শুরু হবে। এজন্য স্নাতকে ভর্তির আবেদন বিগত সব বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। তাই দ্রুত ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন বলেন, “এখন আমরা এ বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাই না, কারণ কোনও মূল্যায়নে এ পর্যন্ত ইউজিসি যায়নি। মন্ত্রণালয় প্রশাসক দিলে তিনি বসে নিজেই বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবেন। এরপরের কাজ হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষাটি সম্পন্ন করা। তবে আমাদের কাজ হবে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা।”
উল্লেখ্য, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা না নেওয়া, ক্লাসরুম–শিক্ষক সংকট, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষের দিকে অন্তর্বর্তী সরকার সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ঘোষণা দেয়।
এম.কে.