ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সভায় অর্থ উপদেষ্টা

রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ আছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ আছে

রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ

আগামী বাজেট পূর্বের মতো চিরাচরিত না হয়ে বরং বাস্তবসম্মত হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ। একই সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ আছে জানিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের কর রেয়াত নেওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যৌথ উদ্যোগে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে ব্যবসায়ীরা সহানুভূতিশীল হলে সরকারও সহানুভূতিশীল হবে। সরকারকে কর দিলেই রেয়াত বা সুবিধা নিতে হবে, এমন ধারণা পরিহার করতে হবে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়বে। ব্যবসায়ীদেরও প্রতিযোগী হতে হবে। ব্যবসায়ীরা কর দিলে সুবিধা পাবেন। কিন্তু অনেকেই কর অব্যাহতি বা কর রেয়াতি সুবিধা চায়। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে অব্যাহতির দিন চলে গেছে। রাজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে এ সরকারের ওপর অনেক চাপ আছে। ব্যবসায়ীরা যে কর দেন তার সুবিধাও তারা ভোগ করবেন।
তিনি বলেন, এবার বাস্তবসম্মত বাজেট করা হবে। চিরাচরিত বাজেটের মতো করব না। আমরা যা বলব তা করার চেষ্টা করব। আমরা চলে গেলেও যাতে মানুষ বলে বাজেট ভালো হয়েছিল। আগে বড় বাজেট দেওয়া হতো, কিন্তু বাস্তবায়ন হতো না। তবে আমরা যে বাজেট দিতে চাই, তা বাস্তবায়ন করতে চাই।
ড. সালেহউদ্দীন বলেন, দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। আমাদের ভুলত্রুটি হতে পারে, তবে আমরা আপনাদের জন্যই কাজ করছি। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে চেষ্টা করছে সরকার।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআর এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে কর ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশন একটি বড় ভূমিকা রাখবে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সেবা ও অভিযোগ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ডিজিটাইজেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এ সময় আমাদের দেশে প্রাপ্ত রাজস্বের দুই-তৃতীয়াংশ গরিবরা দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশে যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভর করে রাজস্ব আদায় হয় সেখানে আমাদের দেশে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করা হয়। 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা যদি ব্যবসায়ী এবং এনবিআরের মধ্যে একটি যৌথ সংযোগ এবং দু-পক্ষের মধ্যে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পারি তা হলে আমরা কর ন্যায্যতা তৈরি করতে পারব। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন হয় এবং দুর্বৃত্তরা ক্ষমতায় এসে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। বিগত সংসদে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিধিত্ব করে দুর্বৃত্তায়নকে একটি প্রায় সাংবিধানিক কাঠামোয় রূপান্তর করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিস্ট আমলে কিভাবে দেশের ক্ষতি করা হয়েছে। ব্যয়ের একটি মহোৎসব তৈরি করা হয়েছে। আমরা এখন মন্ত্রণালয়ে বসে দেখছিÑ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, যার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। যেন ব্যয় করাটা একটা ঈদ পালন করার মতো। এটা শুধু একটি মন্ত্রণালয়ে না, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে হয়েছে।
পূর্বে আমাদের বাজেট ছিল ব্যয়ের মহোৎসবভিত্তিক। বাজেটই করা হতো ব্যয়ের মহোৎসব করার জন্য। কিন্তু আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবতার ভিত্তিতে বাজেট তৈরি করা। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট তৈরি করা।
কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা গেলে সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে, এমনটা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা সকলেই সব ধরনের অব্যাহতি চাইছি। আমাদের সরকার পরিচালনা জন্য এবং দেশের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ উন্নয়নের জন্য অর্থের দরকার আছে। আমরা প্রতি বছরই দেখছি এনবিআরকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের দায় দেওয়া হচ্ছে। কাজেই আমরা যখন দায়িত্ব না নিয়ে প্রস্তাবনা দেব, তখন এনবিআরও দায়িত্ব না নিয়ে বিভিন্ন রকমের কর আমাদের ওপর আরোপ করবে। আমরা যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে, আমি নিশ্চিত এটা সকলের জন্য, সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য, ব্যবসার জন্য লাভবান হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এনবিআরের আলোচনায় বাস্তবতার আলোকে কোনো পরামর্শ ছিল না বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পরামর্শ শুনলাম, জানলাম, দায়গুলো বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে মৌলিকভাবে যেগুলো বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, সেগুলোর প্রতিফলন খুব একটা পাইনি। ২০২৬ সালের নভেম্বরে আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েট হতে যাচ্ছি, সেই বাস্তবতা এবং দুনিয়াব্যাপী ট্রাম্প ট্যারিফের প্রভাবে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে, সে সম্পর্কে তেমন কিছু পাইনি। যে পরামর্শগুলো এসেছে সেখানে কিভাবে আমরা সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারি, তা অস্পষ্ট।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বহুদিন যাবৎ দেখছি আমাদের ব্যবসায়িক নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করেন তারা সুষ্ঠুভাবে আয়-ব্যয়ের স্থিতি হিসেব করে রাষ্ট্র পরিচালনার যে ব্যয় এটা তো আসতে হবে। এবং আমরা যদি ট্যাক্স রিয়ালাইজড না করতে পারি তাহলে আমরা শক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে পারব না, আমাদের সরকার দুর্বল থাকবে। এটা অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আমাদের কাম্য হতে পারে না।
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ব্যবসা, বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, এমনটা জানিয়ে বেসকারি খাতের কাছে আরও সুনির্দিষ্ট এবং গঠনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা আহ্বান করেন।
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট অংশীজনদের প্রত্যাশা ব্যাপক। ২০২৪ এর জুলাই- আগস্টের গণআন্দোলনের চেতনাকে সামনে রেখে বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং অন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য একটি বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব জাতীয় বাজেট প্রণীত হবে বলে এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে। নীতি সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয় থাকবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, এফবিসিসিআইর মহাসচিব মো. আলমগীর, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজীজ রাসেল এবং রিহ্যাবের পরিচালক আইয়ুব আলী প্রমুখ।

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার