.
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ জুন মাসেই পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী জুন মাসেই সংস্থাটি ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করবে। এক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে, আইএমএফ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে আছে। তবে খেলাপি ঋণ দ্রুত কমিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক ড. কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেটে মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকবে। বাজেটে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি, রাজস্ব আয় বাড়ানো। আগামী বাজেটে চেষ্টা করব কীভাবে মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দেওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমিও ঋণ খেলাপিদের ধরতে চাই, ঋণ খেলাপিদের ধরতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুর্নীতি করে কেউ রক্ষা পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য থাকলে, তার বিচার সেনাবাহিনী করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি জানান, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে সরকারের সমর্থন রয়েছে।
এদিকে, আইএমএফের নির্র্বাহী পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, জুন মাসেই সংস্থাটি বাংলাদেশের অনুকূলে তৃতীয় কিস্তি ছাড় করবে। ইতোমধ্যে কিস্তি প্রদানের বিষয়ে তারা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। এছাড়া বৈঠকে সংস্থাটি বেশকিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে যেগুলো আমরা নিজেদের স্বার্থেই বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, আইএমএফের কাছ থেকে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলারের বেশি পাওয়া যাবে। ঋণের কিস্তি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নীতিমালা নিয়ে আইএমফের সঙ্গে ইতোমধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চুক্তিটি শীঘ্রই ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় অনুমোদন হতে পারে। আর ঋণের কিস্তি জুন মাসে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইএমএফের এই কিস্তি দেশে আসার পর বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া আমদানি-রপ্তানিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে চাপ রয়েছে তা প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরির্বতনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এদিকে এখনই সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়। এখানে অনেক নেগোসিয়েশন আছে। আমরা যেটা আশা করছি এ সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব। আমরা কাজ করছি। আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, আপনারা সঠিক পথে আছেন। আপনারা যে কাজ করছেন সমস্যা সমাধানে সেটাতে আমাদের সমর্থন আছে। এদিকে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং গত দুই বছর ধরে ডলারের মজুত ক্রমাগত কমতে থাকা সত্ত্বেও আগামী কয়েক মাস বাংলাদেশের রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকবে বলে মার্কিন রেটিং এজেন্সি মুডিস পূর্বাভাস দিয়েছে। মুডিস আশা করে যে, মহামারির আগের অবস্থার বিবেচনায় বাংলাদেশের আর্থিক পরিস্থিতি দুর্বল হলেও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ সহায়তা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে আইএমএফের ঋণ রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কাজ করেছেন। তিনি অর্থসচিব ছিলেন। তিনি বিষয়টি আরও ভালো জানবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে অনুমতি দিতে বারবার অনুরোধ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেখি কি করা যায়, আমি বিষয়টি নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে কথা বলব। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে আইএমএফের পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমিও তাদের সঙ্গে একমত। ঋণ খেলাপিদের ধরা হবে। তারা যত শক্তিশালী হোন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
এ সময় তিনি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ প্রসঙ্গে বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য থাকলে, তার বিচার সেনাবাহিনী করবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে সরকারের সমর্থন রয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। ঠিক তেমনি যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না, খেলাপি হয়েছেন তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানো প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে, সেগুলো ওভারকাম করতে হবে এবং আগামী বাজেটে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে ইশতেহার দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আগামী বাজেটে কোন খাতে আপনার বা সরকারের প্রাধান্য থাকছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনীতি অনট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে নিত্যপণ্য যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এগুলো নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রার মান এটাও যেন সীমার মধ্যে থাকে। সর্বোপরি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার একটা প্রতিফলন বা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন আগামী বাজেটে। একই সঙ্গে সরকার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, সেটার একটা রিফ্লেকশন (প্রতিফলন) দেখতে চাই।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন দেশের অর্থনীতি দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে- এটা কি আপনি স্বীকার করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন আমি বুঝলাম না। বিরুদ্ধে বললেই কি সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল? আসলে তারা তো বিরোধীপক্ষের লোক। কিছুই হয়নি, সব নষ্ট হয়ে গেছে, এগুলো কী? আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হবে কি না- জানতে চাইলে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এটা বাড়ানো হবে, দেখতে পাবেন বলে আশা করছি। এটা তো একটা প্রসেসের মধ্যে আছে। এটা তো বলা যাবে না। বাজেট ব্যয় সংকোচনমূলক হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকোচনমূলক তো এরই মধ্যে হয়েছে। ওটা পার হয়ে যাচ্ছি আমরা। সংকোচন থেকে আমরা ফেরত আসব। কীভাবে এক্সপানশন (সম্প্রসারণ) করা যায় সেটাই চেষ্টা করছি। আসছে নতুন বাজেট থেকেই সেটি চেষ্টা করা হবে।